শহীদ আজাদ ও একাত্তর জননী।

শহীদ আজাদ ও একাত্তর জননী।

স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে তিনি মেনে নিতে পারেন নি। ছিলেন প্রচন্ড আত্মমর্যাদাবান। বিত্ত –বৈভব আর বিলাসিতা ছেড়ে একমাত্র পুত্রসন্তানের হাত ধরে নেমে এসেছিলেন পথে। আর কখনো স্বামীর ঘরে ফিরে যান নি।অভাব-অনটনকে অগ্রাহ্য করে মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তুলেছিলেন একমাত্র সন্তান আজাদকে।
১৯৭১ সালে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তি সংগ্রামের গনগনে আগুনের আঁচ এসে লাগে তরুণ আজাদের গায়ে । আজাদ মুক্তিযুদ্ধে যাবে, মায়ের অনুমতি চায় সে। কেঁপে উঠেন মা। একমাত্র সন্তান আজাদকে ঘিরে তিনি তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন স্বপ্নের সৌধ।
আর সে ছেলে কিনা যুদ্ধে যেতে চায় !

অবশেষে মা খুলে দেন তাঁর আঁচলের বাঁধন।
আজাদ চলে যায় যুদ্ধে। ক্র্যাক প্লাটুনের দুর্ধর্ষ গেরিলা আজাদ একদিন পাক হানাদার বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। প্রচন্ড নির্যাতনের মুখেও আজাদ কোন তথ্য দেয়না। হানাদাররা শর্ত দেয় আজাদ যদি অন্য গেরিলা যোদ্ধাদের সম্পর্কে তথ্য দেয় তাহলে তাঁকে ছেড়ে দেয়া হবে।
মা আজাদকে নির্দেশ দেন কোনভাবেই যেন সে মুখ না খোলে।
শেষবার আজাদ মায়ের কাছে ভাত খেতে চেয়েছিলেন।

মা পরেরদিন ভাত নিয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু কখনো আর ছেলের দেখা পান নি।
দেশ স্বাধীন হলো কিন্তু আজাদ আর ফিরলো না মায়ের কাছে।

আজাদের মা সাফিয়া বেগম মুক্তিযুদ্ধের পর আরো চৌদ্দ বছর বেঁচেছিলেন।
সন্তানের মুখে ভাত তুলে দিতে পারেন নি তাই জীবনে আর কখনো ভাত খান নি সাফিয়া বেগম।
মুক্তির বেদীমূলে সন্তানকে হাসিমুখে উৎসর্গ করে আজাদের মা সাফিয়া বেগম হয়ে উঠেন সকল শহীদের মা, একাত্তরের জননী।

শ্রদ্ধায় স্মরি, একাত্তরের জননী।

তথ্যসূত্রঃ (মা- আনিসুল হক)

#Ekattorer_Jononi


No comments:

Post a Comment