Showing posts with label Islam. Show all posts
Showing posts with label Islam. Show all posts

রোজা ভঙ্গের সম্পর্কে কিছু প্রশ্নের উত্তর

রোজা ভঙ্গের সম্পর্কে কিছু প্রশ্নের উত্তর 


রোজা ভঙ্গের কারণ স্বপ্নদোষ
 অনেকে আছেন যারা স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভেঙ্গে যায় কি না এটা জানার জন্য গুগলে সার্চ করে থাকেন। তাই এটির উত্তর নিচে দেওয়া হলো। 

প্রশ্নঃ-স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা ভেঙ্গে যায়? 

উত্তর : সিয়ামরত আবস্থায় যদি কারো স্বপ্নদোষ হয়, তাহলে তার সিয়াম নষ্ট হবে না, যেহেতু তার অনিচ্ছায় এ কাজটি হয়েছে। যে কোনো আমলের মধ্যে যদি ইচ্ছেকৃত বিষয় না থাকে বা অনিচ্ছাকৃত কোনো আমল বান্দার কাছ থেকে হয়ে যায়, এটা যদি সিয়াম ভঙ্গকারী হয়ে থাকে, তাহলে এর মাধ্যমে সিয়াম নষ্ট হয় না।

হাত কেটে রক্ত বের হলে কি রোজা ভাঙ্গে
প্রশ্ন : রোজা অবস্থায় যদি শরীরের কোনো অঙ্গ থেকে রক্ত বের হয় কিংবা সিরিঞ্জ দিয়ে শরীর থেকে রক্ত বের করা হয় তাহলে কি রোজা ভেঙ্গে যাবে?

উত্তর : রোজা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত বের হলে রোজা ভাঙ্গে না। তদ্রুপ সিরিঞ্জ দ্বারা বের করা হলেও রোজা ভাঙ্গে না।

তবে বিশেষ ওযর ছাড়া শরীর থেকে ইচ্ছাকৃত এ পরিমাণ রক্ত বের করা মাকরূহ, যার কারণে ওই দিন রোজা পূর্ণ করার শক্তি হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হয়। -সূত্র : সহিহ বোখারি, হাদিস ১৯৩৮, ১৯৪০; ফিকহুন নাওয়াযিল- ২/৩০০

রোজা রেখে দাঁত ব্রাশ করা যাবে কি না
প্রশ্ন : রোজা অবস্থায় কি দাঁত ব্রাশ করা যাবে? এতে কি রোজা নষ্ট হয়ে যাবে?

উত্তর : রোজা অবস্থায় টুথপেস্ট বা মাজন দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা মাকরূহ। আর পেস্ট বা মাজন গলার ভেতর চলে গেলে রোজাই নষ্ট হয়ে যাবে।

তাই রোজা অবস্থায় টুথপেস্ট বা মাজন ব্যবহার করা যাবে না। টুথপেস্ট বা মাজন দিয়ে ব্রাশ করতে হলে সাহরির সময় শেষ হওয়ার আগেই করে নিতে হবে। সূত্র : ইমদাদুল ফাতাওয়া: ২/১৪১; জাওয়াহিরুল ফিকহ: ৩/৫১৮

রোজা না ভঙ্গের কারণ:

 রোজা না ভঙ্গের কারণ:

১. ভুলে খানাপিনা বা স্ত্রীসম্ভোগ করা (শামি : খ. ৩, পৃ. ৩৬৫)


২. যদি ওই ভুলকারী লোকের রোজা রাখার শক্তি থাকে, তাহলে তাকে রোজার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া। আর যদি রোজা রাখার শক্তি না থাকে, তাহলে স্মরণ না করে দেওয়া উত্তম। (আল-ওয়াল ওয়ালিযিয়্যাহ : খ. ১, পৃ. ২০২)


৩. অনিচ্ছায় গলার মধ্যে ধোঁয়া, ধুলাবালি, মশা-মাছি চলে যাওয়া। (শামি : খ. ৩, পৃ. ৩৬৬)


৪. তেল, সুরমা, শিঙা লাগালে যদি গলায় তার স্বাদ পাওয়া যায়। (শামি : খ. ৩, পৃ. ৩৬৬)


৫. স্বপ্নদোষ হওয়া। (তিরমিজি : হাদিস ৭১৯)


৬. যেকোনো সময় মেসওয়াক করা, কাঁচা হোক কিংবা শুষ্ক হোক। (আলমগিরি : খ. ১, পৃ. ১৯৯)


৭. কাঠি দিয়ে কান খোঁচানোর ফলে কোনো ময়লা বের হলে তারপর ময়লাযুক্ত কাঠি বারবার কানে প্রবেশ করালে। (শামি : খ. ৩, পৃ. ৩৬৭)


৮. চানা বুটের চেয়ে ছোট দাঁতের ফাঁকে আটকে যাওয়া কোনো জিনিস খেলে। (শামি : খ. ৩, পৃ. ৩৬৭)


৯. দাঁত থেকে রক্ত বের হয়ে যদি হলক্বে চলে যায়। যদি থুথুর পরিমাণ বেশি হয়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। (শামি : খ. ৩, পৃ. ৩৬৮)


১০. শরীর, মাথা, দাড়ি-গোঁফে তেল লাগালে। (আলমগিরি : খ. ১, পৃ. ১৯৯)


১১. ফুল বা মৃগনাভির ঘ্রাণ নিলে। (শামি : খ. ৩, পৃ. ৩৯৯)


১২. ইচ্ছাকৃতভাবে নাকের শ্লেষ্মা মুখের ভেতর নিয়ে নিলে। (বিনায়া : খ. ৪, পৃ. ২৯৪)


১৩ মুখের থুথু গিলে ফেলা। (নাওয়াজিল : পৃ. ১৫০)


১৪. তিল পরিমাণ কোনো জিনিস বাইরে থেকে মুখে নিয়ে অস্তিত্বহীন করে দেওয়া ও গলায় তার কোনো স্বাদ অনুভব না হলে। (শামি : খ. ৩, পৃ. ৩৯৪)


১৫. কপালের ঘাম কিংবা চোখের দু-এক ফোঁটা অশ্রু কণ্ঠনালিতে পৌঁছে গেলে। রোজা ভাঙে না। (বিনায়া : খ. ৪, পৃ. ২৯৪)


১৬. রোজা শুরু হওয়ার আগেই যদি লজ্জাস্থানে কোনো ওষুধ রাখা হয়। তাহলে রোজা ভাঙা যাবে। (রহিমিয়া : খ. ৪, পৃ. ২৯৪)


১৭. যেকোনো ধরনের ইনজেকশন বা টিকা লাগানো। তবে এমন ইনজেকশন বা টিকা লাগানো মাকরুহ, যেগুলো দ্বারা রোজার কষ্ট বা দুর্বলতা দূরীভূত হয়। (জাওয়াহিরুল ফিকহ : খ. ১, পৃ. ৩৭৯)


১৮. ইনজেকশনের মাধ্যমে রক্ত বের করা হলে রোজা নষ্ট হবে না। আর দুর্বলতার আশঙ্কা না থাকলে মাকরুহও হবে না।


১৯. পান খাওয়ার পর ভালোভাবে কুলি করা সত্ত্বেও যদি থুথুতে লালাভাব থেকে যায়, তাহলে রোজা মাকরুহ হবে না। (এমদাদুল ফাতাওয়া : খ. ২, পৃ. ১৩১)


২০. ভেজা কাপড় শরীরে দেওয়া অথবা ঠাণ্ডার জন্য কুলি করা, নাকে পানি দেওয়া অথবা গোসল করা মাকরুহ নয়। (শামি : খ. ৩, পৃ. ৩৯৪; দারুল উলুম : খ. ৬, পৃ. ৪০৫; বুখারি)


২১. স্বপ্নে কিংবা সহবাসে যদি গোসল ফরজ হয়ে থাকে এবং সুবেহ সাদিকের আগে গোসল না করে রোজার নিয়ত করে, তাহলে তার রোজার মধ্যে অসুবিধা হবে না। (জাওয়াহিরুল ফিকহ : খ. ১, পৃ. ৩৮০)


২২. গলা খাঁকারি দিয়ে খাদ্যনালি থেকে মুখে কাশি বের করা, তারপর আবার গিলে ফেলা উচিত নয়। তবে এটি মাকরুহও নয়। (শামি : খ. ৩, পৃ. ৩৭৩)


২৩. মাথা অথবা চোখে ওষুধ দেওয়া। (এমদাদুল ফাতাওয়া : খ. ২, পৃ. ১২৭)


২৪. হোমিওপ্যাথিক ওষুধের ঘ্রাণ নেওয়া। (মাহমুদিয়া : খ. ১৫, পৃ. ১৮০)


২৫. রোজা অবস্থায় পাইপ দ্বারা মুখে হাওয়া নিলে। (মাহমুদিয়া : খ. ১৫)


২৬. রোজা অবস্থায় নাকের মধ্যে ওষুধ ব্যবহার করার দ্বারা ব্রেনে না পৌঁছলে। (মাহমুদিয়া : খ. ১৫, পৃ. ১৬৯)


২৭. শরীরের কোনো ক্ষতস্থান থেকে পুঁজ বা রক্ত প্রবাহিত হলে বা রক্ত বের করলে রোজা নষ্ট হয় না। তবে রোজাদার থেকে বের করা মাকরুহ। (জাওয়াহিরুল ফিকহ : খ. ১, পৃ. ২৮)


২৮. ডাক্তার যদি চিকিৎসার শুকনো কোনো যন্ত্র পেটে প্রবেশ করায়, অতঃপর তা বের করে ফেলে, তাহলে রোজা নষ্ট হবে না। (আল-ফিকহুল হানাফি)


২৯. পানিতে ডুব দেওয়ার পর কানের ভেতর পানি চলে গেলে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে পানি দিলে রোজা মাকরুহ হয় না। (বিনায়া : খ. ৪, পৃ. ২৯৪; আলমগিরি : খ. ১, পৃ. ২০৪)


৩০. জৈবিক উত্তেজনায় শুধু দৃষ্টিপাতের কারণে যদি বীর্যপাত হয়, তাহলে রোজা ফাসেদ হবে না। (আহকামে জিন্দেগি, পৃ. ২৪৯)


রোজা ভাঙ্গার কারন/অনুমতি কি কি

 রোজা ভাঙ্গার কারন/অনুমতি কি কি


যদি এমন অসুস্থ হয়ে পড়ে যে রােজা রাখার শক্তি নেই বা রােজা রাখার দ্বারা অসুস্থতা বেড়ে যাবে , তাহলে তার জন্য রােজা না রাখার অনুমতি রয়েছে । তবে হ্যাঁ , যখনই সুস্থ হয়ে যাবে , তখনই তার ওপর রােজা কাজা করে নেওয়া ওয়াজিব । ( আপকে মাসায়েল : খ . ৩ , পৃ . ২০২ ) 

যে ব্যক্তি এমন দুর্বল হয়ে যায় যে রােজা রাখার শক্তি নেই । ( আপকে মাসায়েল : খ . ৩ , পৃ . ২০৩ ) 

 এমন ক্ষুধা বা পিপাসা লাগে যে প্রাণ চলে যাওয়ার উপক্রম হয়ে যায় । ( আলমগিরি : খ . ১ , পৃ . ২০৭ ) 

 গর্ভধারিণী বা স্তন্যদানকারিণী মহিলা যদি নিজের অথবা নিজের বাচ্চার প্রাণপাতের আশঙ্কা করেন , তাহলে তাঁর জন্য রােজা ভেঙে ফেলা জায়েজ আছে । ( আলমগিরি : খ . ১ , পৃ . ২০৭ ) 

 রােজা থাকার কারণে যদি জীবনযাপনের সামগ্রী উপার্জন করতে দুর্বল হয়ে যায় , তাহলে তার জন্য রােজা ভেঙে ফেলার অনুমতি রয়েছে । তবে তা পরে কাজা করে নিতে হবে । তা - ও সম্ভব না হলে ফিদিয়া আদায় করবে এবং প্রতি রােজার পরিবর্তে সদকায়ে ফিতর পরিমাণ দান করে ফিদিয়া আদায় করবে । ( শামি : খ . ৩ , পৃ . ৪০০ )

অনুরূপভাবে ফসল কর্তন করার ক্ষেত্রে । যদি রােজা থাকা অবস্থায় ফসল কর্তন করা সম্ভব না হয় । অন্যদিকে দেরি হলে ফসল নষ্ট হয়ে যাবে । তাহলে রােজা না রাখার অনুমতি আছে এবং অন্য সময় কাজা করে নেবে । ( শামি : খ . ৩ , পৃ . ৪০০)

রোজা মকরুহ কারন কি কি | যে সব কারনে রোজা মকরুহ হয়

১. ক) মিথ্যা বলা। (খ) মিথ্যা সাক্ষি দেওয়া। (গ) গিবত করা বা দোষচর্চায় লিপ্ত থাকা। (ঘ) মিথ্যা কছম করা। (ঙ) অশ্লীল কথা বলা বা অশ্লীল কাজ করা। (চ) জুলুম করা। (ছ) কারো সঙ্গে শত্রুতা রাখা। (জ) পরনারীর প্রতি দৃষ্টি করা, তাদের সঙ্গে মেলামেশা করা। (ঝ) সিনেমা দেখা—সবই নাজায়েজ। উপরোক্ত কাজ ছাড়া সব গোনাহর কাজ থেকে বিরত থাকা একান্ত জরুরি। এসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না, তবে মাকরুহ হয়। অবশ্য সওয়াব কম হয়। (জাওয়াহিরুল ফাতাওয়া : খ. ১, পৃ. ২২; জাওয়াহিরুল ফিকহ : খ. ১, পৃ. ৩৭৯; বুখারি, হাদিস নম্বর ১৯০৩)


২. কোনোরূপ অপারগতা ছাড়াই কোনো বস্তু আস্বাদন করা বা চর্বণ করা। (শামি : খ. ৩, পৃ. ৩৯৫)


৩. অনন্যোপায় ছাড়াই কোনো কিছু চর্বণ করে শিশুর মুখে দেওয়া। (ফাতহুল কাদির : খ. ২, পৃ. ৩৪৯)


৪. একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেনাবেচার সময় মধু কিংবা তেলের স্বাদ আস্বাদন করা। (আলমগিরি : খ. ১, পৃ. ১৯৯)


৫. সঙ্গম বা বীর্যপাতের আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও স্ত্রীকে চুমু দেওয়া। (আলমগিরি : খ. ১, পৃ. ২০০)


৬. মুখে অধিক পরিমাণ থুতু একত্র করে গিলে ফেলা। (বিনায়াহ : খ. ৪, পৃ. ২৯৪)


৭. বেশি ক্ষুধা বা পিপাসার কারণে অস্থিরতা প্রকাশ করা। (শামি : খ. ৩, পৃ. ৪০০)


৮. মাজন, কয়লা, গুল, টুথপেস্ট ব্যবহার করা। (জাওয়াহিরুল ফিকহ : খ. ১, পৃ. ৩৭৯)


৯. অহংকারের জন্য সুরমা লাগানো বা গোঁফে তেল লাগানো। (আলমগিরি)


১০. পায়খানার রাস্তায় পানি দ্বারা এত বেশি ধৌত করা যে ভেতরে পানি চলে যাওয়ার আশঙ্কা হয়। (আলমগিরি : খ. ১, পৃ. ১১৯)


১১. ক্ষতির আশঙ্কা হলে শ্রমিকের জন্য মালিকের অনুমতি ছাড়া রোজা রাখা।


১২. প্রয়োজন ছাড়া ডাক্তারের মাধ্যমে দাঁত তোলা মাকরুহ। তাতে যদি রক্ত বা দাঁতে লাগানো ওষুধ পেটে চলে যায়, যা থুতুর সমপরিমাণ বা তার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। (আহসানুল ফাতাওয়া : খ. ৪, পৃ. ৪২৬)


১৩. এমন কোনো কর্ম করা, যা শরীরকে দুর্বলতার দিকে নিয়ে যায়, তা মাকরুহ। (শামি : খ. ৩, পৃ. ৪০০)


১৪. রোজাদারের জন্য অজু ছাড়া কুলি করা মাকরুহ। (আল-ওয়াল ওয়ালিযিয়্যাহ : খ. ১, পৃ. ২২৭)

রোজা ভঙ্গের কারণ সমুহ:

 রোজা ভঙ্গের কারণ সমুহ:

ইচ্ছাকৃত পানাহার করলে।

স্ত্রী সহবাস করলে ।

কুলি করার সময় হলকের নিচে পানি চলে গেলে (অবশ্য রোজার কথা স্মরণ না থাকলে রোজা ভাঙ্গবে না)।

 ইচ্ছকৃত মুখভরে বমি করলে।

 নস্য গ্রহণ করা, নাকে বা কানে ওষধ বা তৈল প্রবেশ করালে।

 জবরদস্তি করে কেহ রোজা ভাঙ্গালে ।

ইনজেকশান বা স্যালাইরনর মাধ্যমে দেমাগে ওষধ পৌছালে।

কংকর পাথর বা ফলের বিচি গিলে ফেললে।

 সূর্যাস্ত হয়েছে মনে করে ইফতার করার পর দেখা গেল সুর্যাস্ত হয়নি।

 পুরা রমজান মাস রোজার নিয়ত না করলে।

 দাঁত হতে ছোলা পরিমান খাদ্য-দ্রব্য গিলে ফেললে।

ধূমপান করা, ইচ্ছাকৃত লোবান বা আগরবাতি জ্বালায়ে ধোয়া গ্রহন করলে।

মুখ ভর্তি বমি গিলে ফেললে ।

রাত্রি আছে মনে করে সোবহে সাদিকের পর পানাহার করলে।

 মুখে পান রেখে ঘুমিয়ে পড়ে সুবহে সাদিকের পর নিদ্রা হতে জাগরিত হওয়া এ অবস্থায় শুধু কাজা ওয়াজিব হবে।

যখন কাজা ও কাফফারা ওয়াজিব 

 ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কোনাে জিনিস খাওয়া বা পান করা , যা সাধারণত খাওয়া বা ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয় । ( আলমগিরি : খ , ১ , পৃ . ২০৫ ) 

 যদি ইচ্ছাকৃতভাবে গিবত করার পর পানাহার করে , তাহলে তার ওপর কাজা - কাফ্ফারা উভয়ই ওয়াজিব । ( ফাতহুল কাদির : খ . ২ , পৃ . ৩৮০ ) 

 রােজাদার যদি সমকামিতায় লিপ্ত হয় , তাহলে তার ওপর কাজা - কাফফারা দুটিই ওয়াজিব । ( আল ওয়াল ওয়ালিযিয়্যাহ : খ . ১ , পৃ . ২২৩ ) 

পুরুষ যদি মহিলার সঙ্গে জোরজবরদস্তি করে সম্ভোগ করে , তাহলে মহিলার ওপর শুধু কাজা ওয়াজিব , কাফফারা নয় । আর পুরুষের ওপর কাজা - কাফ্ফারা উভয়ই ওয়াজিব । ( আল - ওয়াল ওয়ালিযিয়্যাহ : খ . ১ , পৃ . ২২৪ ) 

ইচ্ছাকৃতভাবে স্ত্রীসম্ভোগ করা । ( বুখারি , হাদিস : ১৮০১ ) 

War of The Talash River -★তালাস নদীর যুদ্ধ: যে যুদ্ধের মাধ্যমে উন্মোচিত হয়েছিল কাগজ তৈরির রহস্য★

★তালাস নদীর যুদ্ধ: যে যুদ্ধের মাধ্যমে উন্মোচিত হয়েছিল কাগজ তৈরির রহস্য★

লেখক :Shakib Mustavee


কাগজের জন্ম চীন দেশে এ কথা কে না জানে? সভ্যতার গতিপথ বদলে দেওয়া অনন্য এই আবিষ্কারের জন্য আজও বিশ্বসভ্যতা চৈনিকদের কাছে ঋণী। তবে আবিষ্কারের সাথে সাথেই কাগজের প্রযুক্তি বিশ্ববাসী জানতে পারেনি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, বহিঃবিশ্ব থেকে নিজেদের আলাদা করে রাখতে সর্বদা আগ্রহী চীনারা কাগজ তৈরির নিগূঢ় রহস্য গোপন করে রাখতে পেরেছিল প্রায় আটশ বছর! কিন্তু হঠাৎ একদিন চীনের এই টপ সিক্রেট জেনে গেল সারাবিশ্ব। অবশ্য সেটা কোনো শান্তিপূর্ণ সায়েন্টিফিক কনফারেন্সের মাধ্যমে নয়, বরং রীতিমত এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে। পৃথিবীর ইতিহাসে নতুন বাঁকের সূচনা করা এই যুদ্ধ ‘ব্যাটেল অফ তালাস রিভার’ বা ‘তালাস নদীর যুদ্ধ’ হিসেবে পরিচিত। ফিচারটি সাজানো হয়েছে এই যুদ্ধের আদ্যোপান্ত নিয়ে।


পটভূমি


সময়টা অষ্টম শতাব্দীর মাঝামাঝি। চীনের ট্যাং রাজবংশ (৬১৮-৯০৬ খ্রি.) তখন পূর্বদিকের একচ্ছত্র অধিপতি। একে একে মধ্য এশিয়ার তুর্কি রাজ্যগুলো চলে আসছিল তাদের করায়ত্বে। এদিকে মধ্যপ্রাচ্যে জেগে উঠেছে ইসলামী খেলাফত। হযরত উমার ফারুক (রাঃ) এর খিলাফতের সময় (৬৩৪-৬৪৪ খ্রিঃ) বিশাল পারস্য সাম্রাজ্য জয় করে মধ্য এশিয়ার উপকন্ঠে পৌঁছে গিয়েছিল মুসলিম বাহিনী। তাঁর মৃত্যু পরবর্তী একশ বছর অর্থাৎ খুলাফায়ে রাশেদিন (৬৪৪-৬৬১ খ্রিঃ) এবং উমাইয়া আমলে (৬৬১-৭৫০ খ্রিঃ) সেই ধারা অব্যহত ছিল। অবশ্য এ সময়ে মুসলিম বাহিনীর বিজয়ের গতি ছিল প্রথম যুগের তুলনায় মন্থর। তা সত্ত্বেও মোটামুটি অষ্টম শতাব্দীর প্রথম দুই দশকের মধ্যে সমরখন্দ, বুখারাসহ মধ্য এশিয়া; বিশেষ করে আফগানিস্তান ও উজবেকিস্তানের বিরাট অংশ মুসলিম সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত হয়। ফলে প্রাচ্য এবং মধ্য প্রাচ্যের দুই পরাশক্তির মধ্যে মোকাবিলা তখন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। উল্লেখ্য, ৭০৫-৭১৫ খ্রিস্টাব্দে উমাইয়া খলিফা আল ওয়ালিদের খিলাফতকালে সেনাপতি কুতাইবা ইবনে মুসলিমের নেতৃত্বে মুসলিমরা সেন্ট্রাল এশিয়ার বিস্তৃত অংশ জয় করেছিলেন।


ট্যাং রাজবংশের সাথে উমাইয়া খিলাফতের প্রথম সংঘর্ষ বাঁধে ৭১৫ খ্রিস্টাব্দে। কারণটা ছিল ফারগানা উপতক্যায় আধিপত্য বিস্তার। সে সময় তিব্বতীয় রাজবংশ উমাইয়াদের পক্ষাবলম্বন করেছিল। প্রাথমিকভাবে উমাইয়া ও তিব্বতীয়দের মিলিত শক্তির লক্ষ্য অর্জিত হলেও অচিরেই ট্যাং সেনাবাহিনী তাদের হৃত স্বার্থ পুনরুদ্ধার করে। এদিকে দুই বছর পর ৭১৭ সালে উমাইয়া ও তিব্বতীয়রা মিলিতভাবে শিনজিয়াং আক্রমণ করে এবং আকসু অঞ্চলের দুটি শহর অবরোধ করে বসে। অবশ্য ট্যাং রাজবংশের অনুগত কারলুক তুর্কদের একটি বাহিনী সেই অবরোধ ভেঙে শহর দুটিকে পুনরায় ট্যাং রাজবংশের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। এই কারলুকরাই পরবর্তীতে সময়ে তালাস নদীর যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।   


পরের তিন দশক পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত ছিল। উমাইয়াদের সাথে তুর্কি রাজ্যগুলোর বেশ কিছু সংঘর্ষ হলেও এ সময় উমাইয়া খিলাফতের সীমানায় খুব বেশি পরিবর্তনও আসেনি। তবে এ সময়ে মধ্য এশিয়ায় ট্যাং রাজবংশের আধিপত্য ও প্রতিপত্তি যথেষ্ট বেড়েছিল। বলা হয়, ট্যাং রাজবংশ তাদের তিন শতাব্দী রাজত্বকালের ইতিহাসে ৭৫০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ প্রতিপত্তির একদম চূড়ায় আরোহণ করেছিল। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস হলো, পর্বতের চূড়ায় আরোহণ করতে দীর্ঘসময় লাগলেও পতনকাল কিন্তু খুবই সামান্য। ট্যাং রাজবংশের ক্ষেত্রে ঠিক সেটাই ঘটেছিল।


৭৪৭ থেকে ৭৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ট্যাং সেনাবাহিনীর কোরীয় সেনাপতি গাও শিয়ানশি তৎকালীন তিব্বত রাজ্যের অন্তর্গত গিলগিত (বর্তমানে পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে ) জয় করেন ও মধ্য এশিয়ার বেশ কিছু ছোট ছোট রাজ্যকে ট্যাং সাম্রাজ্যের করদ রাজ্যে পরিণত করে। বিদ্রোহের কারণে উমাইয়া সাম্রাজ্যের অবস্থা তখন টালমাটাল। উমাইয়াদের এই দুর্বলতাকে গাও প্রাধান্য বিস্তারের মোক্ষম সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করলেন। তবে এক আচানক পরিবর্তন সব হিসাব নিকাশ পাল্টে ফেললো। উমাইয়াদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ সফল হলো। প্রায় নব্বই বছর মুসলিম বিশ্বকে শাসন করার পর ৭৫১ খ্রিস্টাব্দে উমাইয়াদের খিলাফতের অবসান ঘটলো আব্বাসীয়দের হাতে। বিদ্রোহীদের নেতারা ছিলেন রাসুল (সাঃ) এর আপন চাচা হযরত আব্বাস (রাঃ) এর বংশধর। তাই তাদের আব্বাসীয় বলা হতো। এছাড়া তৎকালীন নিজের আহলে বায়াতের অনুসারী দাবিকারী শিয়ারাও আব্বাসীয়দের সাথে বিদ্রোহে যোগ দিয়েছিল।


প্রথম আব্বাসীয় খলিফা হলেন আস সাফফা। তাঁর আসল নাম যা-ই হোক, উপনাম আস সাফফা হিসেবেই তিনি ইতিহাসে বহুল পরিচিত, যার অর্থ রক্তপিপাসু। শুরুর দিকে আব্বাসীয় খিলাফতের বিজয়নেশা উমাইয়াদের চেয়েও তীক্ষ্ণ ছিল। আর এ কারণেই ক্ষমতায় বসে আস সাফফা মধ্য এশিয়ার দিকে মনোনিবেশ করেন।


এবারও ফারগানা উপত্যকা ছিল দুই পরাশক্তির দ্বন্দ্বের কারণ। ছোট্ট রাজ্য ফারগানা ও তাসখেন্তের মধ্যে দ্বন্দ্ব গড়ালো দুই পরাশক্তির যুদ্ধে।


ফারগানার আমীরের আমন্ত্রণে গাও শিয়ানশির সৈন্যরা তাসখেন্ত দখল করে নিলে অনন্যোপায় তাসখেন্তের আমীর স্থানীয় আরবদের সাহায্য চান। উল্লেখ্য উজবেকিস্তানের বর্তমান রাজধানী হল তাসখেন্ত। তাসখেন্তের আমীরের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুসলিম সেনাপতি যিয়াদ ইবনে সালিহ তাঁর সৈন্যদের নিয়ে অগ্রসর হয়। তাঁর সাথে ছিল তিব্বতীয় এবং উইঘুররা। এদিকে রিইনফোর্সমেন্টের আশায় গাও শিয়ানশি পশ্চাৎপসরণ করতে শুরু করলেন উত্তর দিকে।


শুরু হলো তালাস নদীর যুদ্ধ


অনিবার্য সংঘর্ষের আগে পূর্ব ও পশ্চিমের দুই পরাশক্তি এবং তাদের মিত্রদের নিয়ে গঠিত সেনাদল মিলিত হলো তালাস নদীর পাড়ে। তালাস নদী কিরগিজস্তান এবং কাজাখস্তানের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ‘তালাস নদীর যুদ্ধ’ যে তালাস নদীর পাড়ে বা এর আশেপাশে সংঘঠিত হয়েছিল এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই ঐতিহাসিক স্থানটি ঠিক কোথায় অবস্থিত তা আজও চিহ্নিত করা যায়নি। তবে মনে করা হয়, খুব সম্ভবত জায়গাটি কিরগিজস্তান এবং কাজাখস্তান সীমান্তের কাছে।


যুদ্ধে কোন পক্ষে সৈন্য কত ছিল এ নিয়ে দু'পক্ষের পরস্পর বিরোধী দাবি রয়েছে। চীনাদের ভাষ্যমতে, আব্বাসী বাহিনী এবং তাদের মিত্রদের নিয়ে গঠিত বাহিনীর সংখ্যা ছিল দুই লক্ষাধিক। এদিকে ট্যাং ও তাদের মিত্রদের দ্বারা গঠিত চৈনিক বাহিনীর সৈন্যসংখ্যা সম্পর্কে আব্বাসীয়দের দাবি ছিল এক লক্ষের কাছাকাছি। তবে নিরপেক্ষ বিচার বিশ্লেষণ এবং আধুনিক গবেষণা থেকে জানা যায়, উভয় পক্ষেরই সৈন্য সংখ্যা ছিল মোটামুটি ২৫-৩০ হাজারের মতো, অর্থাৎ দুই পক্ষের শক্তিমত্তা সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল।


প্রথম পাঁচদিন উভয় পক্ষের লড়াই চলছিল সমানে সমানে। বলতে গেলে, ট্যাং সেনাবাহিনীই কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় ছিল। আমাদের মনে রাখতে হবে, খিলাফতের প্রাণকেন্দ্রগুলো থেকে মধ্য এশিয়ার বিশাল দূরত্ব এবং এসব অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ অনারব ও অমুসলিম হওয়ায়, আব্বাসীয় বাহিনী পশ্চিমদিকের ফ্রন্টগুলোতে যতটুকু শক্তিশালী ছিল, মধ্য এশিয়া ফ্রন্টে ততটা শক্তিশালী ছিল না। এতদসত্ত্বেও কারলুক তুর্কদের এক রহস্যজনক ভূমিকায় ষষ্ঠ দিনে যুদ্ধের ফলাফল আব্বাসীয়দের পক্ষে এলো। পরাজয় ঘটলো ট্যাং সেনাবাহিনীর। চৈনিক সূত্রগুলোর দাবি, কারলুক তুর্করা যুদ্ধের মাঝখানে আচমকা বিশ্বাসঘাতকতা করে আব্বাসীয়দের পক্ষাবলম্বন করায় তাদের পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। এদিকে আব্বাসীয়দের দাবি, কারলুক তুর্করা যুদ্ধের আগেই তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিল এবং তারা দূর থেকে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছিল।


কারলুকরা কি সত্যিই বিশ্বাসঘতকতা করেছিল?


দুই পক্ষের এমন পরস্পরবিরোধী দাবি থেকে সত্যটা নিরূপণ করা বেশ কঠিন। তবে চৈনিকদের দাবি যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে কারলুক তুর্করা তাদের সাথেই আব্বাসীয়দের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধ করছিল। হঠাৎ করে এতগুলো সৈন্যের পক্ষ পরিবর্তন করার কাহিনী শুনতে বেশ অবিশ্বাস্য লাগে। তার চেয়ে বরং দুই পক্ষের দাবি থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি- কারলুক তুর্করা প্রথম পাঁচদিন যুদ্ধ না করে দূরে ছাউনি করে অবস্থান করছিল। পূর্বের মিত্রতা থেকে ট্যাং সেনাবাহিনী মনে করেছিল, এবারো বুঝি কারলুকদের সমর্থন পাওয়া যাবে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে যে কারলুক ও আব্বাসীয় কোয়ালিশনের মধ্যে কারলুকদের চুক্তি হয়েছে, সেই কথা তারা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি। তাই কারলুকদের এই আচমকা আক্রমণ ট্যাংদের দৃষ্টিকোণ থেকে অনেকটাই বিশ্বাসঘতকতার শামিল। এছাড়া এই তত্ত্ব মেনে নিলে, আব্বাসীয়দের সাথে যে কারলুকরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল সেটাও সত্য বলে প্রমাণিত হয়।  


সে যা-ই হোক, তালাস নদীর যুদ্ধে যুদ্ধে চীনাদের শোচনীয় পরাজয় ঘটেছিল। তবে যুদ্ধে চৈনিকদের কেন পরাজয় হয়েছিল সেই বিশ্লেষণের চেয়ে এই পরাজয়ের সুদূরপ্রসারী ভূমিকা কী ছিল তা ঐতিহাসিকভাবে অধিক গুরুত্বপূর্ণ।


যুদ্ধ পরবর্তী অবস্থা


এই যুদ্ধে আব্বাসীয়দের একতরফা বিজয় অর্জিত হলেও সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এই যুদ্ধ থেকে কোনো পক্ষই আসলে সুবিধা নিতে পারেনি। কারণ আব্বাসীয়রা এই বিজয়কে পুঁজি করে সামনের দিকে অর্থাৎ চীনের মূল ভূখন্ডে অগ্রসর হতে পারতো। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো দূরত্ব। এত লম্বা সাপ্লাই লাইন রক্ষা করা যেকোনো সেনাবাহিনীর পক্ষে প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। এছাড়া প্রতিশোধের নেশায় মত্ত ট্যাং রাজবংশও পরবর্তীতে আব্বাসীয়দের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। ৭৫৫ খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে শুরু হওয়া বিদ্রোহের ভয়াবহ দাবানলে উল্টো ট্যাং সাম্রাজ্যই অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। ট্যাং রাজবংশের মসনদ কাঁপিয়ে দেওয়া এই বিদ্রোহ লুশান বিদ্রোহ নামে পরিচিত। লুশান বিদ্রোহ স্থায়ী হয়েছিল প্রায় ৭ বছর। আব্বাসীয়রা এ সময় ট্যাং রাজবংশের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। ফলে বৈরিতার অবসান ঘটে দুই পরাশক্তির।


যেভাবে দুনিয়া জেনে গেল কাগজের অজানা রহস্য


তালাস নদীর যুদ্ধে বহু সংখ্যক চীনা সৈন্য যুদ্ধবন্দী ও নিহত হয়। বিশাল ট্যাং সেনাবাহিনীর সেনাপতি গাও শিয়ানশি অল্প কিছু সৈন্যসহ প্রাণ নিয়ে পালাতে সক্ষম হন। তবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, যুদ্ধবন্দী চীনাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন দক্ষ কারিগর এবং প্রকৌশলী। তাদের মাধ্যমেই কাগজ তৈরির প্রযুক্তি আরবদের হস্তগত হয়। সেই খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে সাই লুন কাগজ আবিষ্কার করার পর, দীর্ঘ আটশ বছর সেই কৌশল কেবল চীনা, কোরীয় ও জাপানীদেরই জানা ছিল।


কিন্তু তালাস নদীর যুদ্ধের পর কাগজ তৈরির প্রযুক্তি প্রথমবারের মতো পূর্ব এশিয়ার বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সমরখন্দে কাগজ কল স্থাপিত হয় এবং ক্রমান্বয়ে বাগদাদসহ আব্বাসীয় খিলাফতের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে এই শিল্পের বিকাশ ঘটে। ইউরোপের প্রথম কাগজকল স্থাপিত হয়েছিল স্পেনের ভ্যালেন্সিয়ায়, ১০৫৬ সালে। অবশ্যি সেটাও আরব বণিকদেরই প্রভাবে, কেননা সে সময়ে আইবেরীয় উপদ্বীপ অর্থাৎ স্পেন-পর্তুগালের বিশাল অংশ মুসলিম-আরবদের অধীনে ছিল।


তালাস নদীর যুদ্ধের সুদূরপ্রসারী প্রভাব


শুধু কাগজের প্রযুক্তি স্থানান্তরের কারণে নয়, তালাস নদীর যুদ্ধ বহুমাত্রিক কারণে ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আছে।


প্রথমত, মধ্য এশিয়ার পরবর্তী চার শতাব্দীর ভূ-রাজনীতি বদলে দিয়েছিল এই একটি যুদ্ধ। সাথে সাথে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বিস্তার করেছিল ধর্ম, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে। কারণ তালাস নদীর যুদ্ধ অনেকটা অলিখিতভাবে নির্ধারণ করে দিয়েছিল মধ্যে এশিয়ার কতটুকু অংশ আব্বাসীয় খেলাফত ও ট্যাং রাজবংশের মধ্যে থাকবে। অর্থাৎ সে সময়ের দুই পরাশক্তির স্থানগত সীমানা নির্ধারিত হয়েছিল এই যুদ্ধে।


তালাস নদীর যুদ্ধে বিজয়ের পর সিল্করুটের একটা বড় অংশ আব্বাসীয়দের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে, যা তাদের জন্য অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত লাভজনক ছিল। এছাড়া মধ্য এশিয়ার তুর্কী গোত্রগুলো এ সময় মুসলিমদের সান্নিধ্যে আসে এবং পরবর্তী তিন শতাব্দীতে ক্রমান্বয়ে এদের অধিকাংশই ইসলাম গ্রহণ করে। এদিকে তালাস নদীর যুদ্ধের পর তিব্বত ও চীনের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে আসে। এ কারণে পরবর্তী শতাব্দীগুলোতে তিব্বত এবং চীনের বৌদ্ধ ধর্ম ভিন্নভাবে বিবর্তিত হয়েছিল, যার ফলশ্রুতিতে বৌদ্ধ ধর্মের চীনা সংস্করণ এবং তিব্বতীয় সংস্করণে এত পার্থক্য পরিলক্ষিত  হয়।


ইতিহাসে পাতায় তালাস নদীর যুদ্ধ    


মজার ব্যাপার হলো, তৎকালীন মুসলিম ঐতিহাসিকদের লেখায় কিন্তু ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই যুদ্ধের তেমন কোনো বিবরণ পাওয়া যায় না। এমনকি জগৎবিখ্যাত ঐতিহাসিক এবং তাফসীরকারক জারির তাবারী (রাহিঃ) (৮৩৯-৯২৩) তাঁর কোনো লেখায় তালাস নদীর যুদ্ধের কথা উল্লেখ করেননি। তবে এই যুদ্ধের প্রায় অর্ধ সহস্রাব্দ পর ইবনে আসির (রাহিঃ) (১১৬০-১২৩৩) এবং ইমাম যাহাবি (রাহিঃ) (১২৭৪-১৩৪৮) এর লেখায় এই যুদ্ধের উল্লেখ পাওয়া যায়। সে যা-ই হোক, তালাস নদীর যুদ্ধ ইতিহাসে অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রেখেছিল, যা কোনো অংশেই টুরসের যুদ্ধ কিংবা আইন জালুতের যুদ্ধের চেয়ে কম নয়। কিন্তু বিস্ময়করভাবে, এই যুদ্ধটি সাধারণ মানুষ তো বটেই, এমনকি ইতিহাসের ঔৎসুক পাঠকদের কাছেও বেশ অপরিচিত।


শেষ কথা


'তালাস নদীর যুদ্ধ'কে আদর্শিক যুদ্ধ না বলে স্বার্থভিত্তিক যুদ্ধ বলাই শ্রেয়। কারণ মুসলিম আব্বাসীয় বাহিনীর সাথে অমুসলিম উইঘুর ও তিব্বতীয় সেনারাও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ট্যাং সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। এ যুদ্ধে ট্যাং বাহিনীর প্রধান সেনাপতি গাও শিয়ানশি নিজেও জাতিগতভাবে চৈনিক ছিলেন না। সব মিলিয়ে তালাস নদীর যুদ্ধটি ছিল আপাতভাবে অগুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ইতিহাসের গতিপথ বদলে দেওয়া একটি মহাকাব্যিক যুদ্ধ। আর এ কারণেই হাজার বছর পরও এই যুদ্ধের উপাখ্যান লেখা হচ্ছে, হচ্ছে আলোচনা-সমালোচনা।

Gazi Hasan Pasha - Lion Pasha - আলজেয়ার্সের গাজী হাসান পাশা (১৭১৪-১৭৯০ খ্রিস্টাব্দ), তিনি "সিংহ পাশা" হিসেবেও ততোধিক পরিচিত।

Gazi Hasan Pasha - Lion Pasha - আলজেয়ার্সের গাজী হাসান পাশা (১৭১৪-১৭৯০ খ্রিস্টাব্দ), তিনি "সিংহ পাশা" হিসেবেও ততোধিক পরিচিত।

একজন তরুণ জানিসারি অবস্থায় তিনি একটি স্প্যানিশ যুদ্ধজাহাজ 🇪🇸 আটক করেন।জাহাজটির মালিকানা তিনি নিয়ে নেন আর তখন থেকেই তার জীবনের কিংবদন্তীতুল্য ঘটনাগুলোর সূত্রপাত ঘটে।


★তিনি ভূমধ্যসাগরে অসংখ্য আমেরিকান যুদ্ধজাহাজ 🇺🇸 আটক এবং ধ্বংস করেন।

★আমেরিকার উপর কর আরোপ করেন।আমেরিকার স্বাধীনতার পর অটোমানরাই 🇹🇷 একমাত্র সাম্রাজ্য যারা আমেরিকাকে কর প্রয়োগে বাধ্য করে।

★তুর্কি ভাষায় আমেরিকার সাথে "ত্রিপলি চুক্তি"র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।আমেরিকার ইতিহাসে এটিও প্রথম এবং একমাত্র চুক্তি যা কোন বিদেশী ভাষায় লিপিবদ্ধ হয়েছিল।

★আমেরিকা অটোমান সাম্রাজ্যকে এককালীন ৬,৪২,০০০টি অটোমান স্বর্ণখন্ড প্রদান করে এবং বছরে ১২,০০০টি স্বর্ণখন্ড প্রদানে বাধ্য ছিল।

★আলজেয়ার্সে তিনি একটি সিংহ পোষ মানিয়ে নেন এবং শত্রু জাহাজ আটকের পর পোষা সিংহ নিয়ে তিনি গ্রেফতারকৃত জাহাজ পরিদর্শনে যেতেন।

★নিজের আয়কৃত অর্থ দিয়েই ৩ বছরের মধ্যে একটি নতুন এবং আধুনিক অটোমান নৌবহর তৈরি করেন।

★ইন্তেকালের পূর্বে অটোমান সাম্রাজ্যের একজন প্রধান উজিরের পদ লাভ করেন।

★আজকের তুরষ্কের ন্যাভাল একাডেমীগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর তিনিই স্থাপন করে গেছেন।

★অসংখ্য মসজিদ এবং বিদ্যালয় স্থাপন করেছেন।

★নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এবং কোন পরিবারও রেখে যাননি।

First Nurse of Islamic History - Rufida al aslamia - রুফাইদা আল আসলামিয়া: ইসলামের ইতিহাসের প্রথম নার্স

First Nurse of Islamic History - Rufida al aslamia - রুফাইদা আল আসলামিয়া: ইসলামের ইতিহাসের প্রথম নার্স

রুফাইদা আল আসলামিয়া: ইসলামের ইতিহাসের প্রথম নার্স


আমাদের কাছে আধুনিক নার্সিং বা রোগীসেবার জনক ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল। ১৮৫০ সালে ক্রাইমিয়ারযুদ্ধে ফ্লোরেন্স আহত সৈন্যদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। মানবসেবার ইতিহাসে তিনি অমর। কিন্তু, অনেকেই জানেনা যে ফ্লোরেন্সের প্রায় ১২০০ বছর আগে মদিনার আনসার রমণীদের মধ্যে একজন মানব সেবায় আত্মনিয়োগ করে ইসলামী ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। তাঁর নাম, বিখ্যাত রমণী সাহাবি রুফাইদা আল আসলামিয়া (রাঃ)। তিনি আমাদের প্রিয় নবী রাসুল(সাঃ)-এর যুদ্ধে আর্ত ও আহতদের সেবিকা হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রে নিজের তাঁবুতে তিনি তৈরি করেন ‘খিমাতু রুফাইদা’ বা রুফাইদায় সেবাক্ষেত্র নামক অস্থায়ী চিকিৎসাকেন্দ্র।


রুফাইদা আল আসলামিয়া-র শৈশব ও শিক্ষাঃ

বনু খাজরায আসলাম গোষ্ঠীতে ৬২০ অব্দে রুফাইদার জন্ম হয়। তাঁর পিতা সাদ আল আসলামি ছিলেন মদিনার একজন প্রখ্যাত চিকিৎসক। ছোট থেকেই রুফাইদা তাঁর আব্বাকে সাহায্য করতেন নানা বিষয়ে। বলা যায়, নিজের আব্বার হাতেই তাঁর রোগ নিরাময় ও চিকিৎসাবিজ্ঞান শেখা। তিনি যেন আজন্ম জানতেন তাঁকে মানুষের সেবা করতে হবে। সেই হিসেবেই নিজেকে তৈরি করেছিলেন রুফাইদা। শুধু তাই নয়, তিনিই মদিনায় প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। আমাদের প্রিয় নবী যখন মদিনাতে পা রাখেন, রুফাইদাই অন্যতম একজন যিনি তাঁকে স্বাগত জানান।


তাঁর কৃতিত্ব ও সেবাপরায়ণতাঃ

রুফাইদা আল আসলামিয়া শৈশব থেকেই ছিলেন অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের ও ধৈয্যশীলা। তিনি অসুস্থ আর্ত ও শিশুদের কল্যাণেই নিজের দিনের বেশিরভাগ ব্যয় করতেন। ইমাম বুখারি(রঃ)-এর কিতাব ‘আদাবুল মুফুরাদ” থেকে জানা যায়, মসজিদ এ নববীর পাশে রুফাইদার চিকিৎসা কেন্দ্র তাঁবু ছিল। তিনি মদিনার অন্যান্য আনসার নারী সাহাবিকেও নার্সিং ও রোগ নিরাময়ের প্রশিক্ষণ দেন। তাঁর কাছে শিক্ষাপ্রাপ্ত সাহাবিরা বদর, খন্দক, খাইবার সহ নানা যুদ্ধে আহতদের চিকিৎসা করে সুস্থ করে তোলে।


ইবনে সাদ বলেন, তিনি হিজরতের পরে বাইআত হয়েছেন। মসজিদ এ নববীর পাশেই তার তাঁবু ছিল। সেখানে তিনি অসুস্থ এবং আহতদের সেবা করতেন।(তাহযীবুত তাহযীব ২৭৯১; তবাকাতে ইবনে সা‘দ)


খাইবারের যুদ্ধের ঘটনাঃ

খাইবারের যুদ্ধের দিন রাসুল(সাঃ) যখন যুদ্ধযাত্রার জন্য তৈরি হচ্ছেন, তখন রুফাইদা ও তাঁর নারী সাহাবিরা এসে আহত ও মুসলমানদের সাহায্য করার জন্য যুদ্ধে যেতে চান। আমাদের প্রিয় নবী অনুমতি দিলে যুদ্ধক্ষেত্রে স্থাপিত হয় খিমাতু রুফাইদা।


মাহমুদ ইবন লাবিদ থেকে জানা যায়, খন্দকের যুদ্ধে সাদ বিন মুয়াজ(রাঃ)-এর গুরুতর আঘাত লাগলে প্রিয় নবীর নির্দেশে তাঁকে খিমাতু রুফাইদাতে পাঠানো হয়। রুফাইদা ও তাঁর সাহাবিরা অত্যন্ত যত্ন সহকারে তাঁর চিকিৎসা করেন।নবী (সাঃ) রোজ সাদ (রাঃ)-এর কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতেন, তোমার দিন কেমন কাটল, তোমার রাত কেমন কাটল? তিনি তাঁকে (নিজ অবস্থা) অবহিত করতেন। (আদবুল মুফরাদ, হাদিস : ১১৩৯)


খাইবারের যুদ্ধে রুফাইদার অবদানে প্রিয় নবী অত্যন্ত প্রীত হয়েছিলেন। তাঁর এই অবিস্মরণীয় সেবার পুরস্কার হিসেবে প্রিয় নবী পুরুষ মুজাহিদদের মতো রুফাইদা ও তাঁর সাহাবিদেরও গণিমতের অংশ প্রদান করেন।


রুফাইদা আল আসলামিয়া-র অবদান :

রুফাইদা দিন রাত এক করে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছন মানবসেবায়। যুদ্ধের কঠিন মুহূর্তে মৃত্যুভয়ও তাঁকে আহতর সেবা থেকে টলাতে পারেনি। পরবর্তীতে শান্তিপূর্ণ অবস্থাতেও মানুষ ছুটে আসত তাঁর কাছে। তিনি শুধু রোগ নিরাময় করতেন তা নয়, নানাবিধ সামাজিক উন্নতির কাজও করতেন। তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ ভাবে ইসলামের প্রতি আত্মনিমগ্ন। নিজের সম্পদ ও অর্থ ব্যয় করে চিকিৎসা ও সেবা প্রদান করতেন সকল আর্ত ও অসুস্থকে। কথিত আছে, তিনি আয়িষা(রাযীঃ)-কেও রোগ নিরাময় ও সেবা করার কৌশল শিখিয়েছিলেন।


রুফাইদা(রাঃ) ইসলামী ইতিহাসে এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা। তাঁর সম্মানে আগা খান বিশ্ববিদ্যালয় একটি নার্সিং কলেজ স্থাপন করেছে। শুধু তাই নয়, বাহরাইনের রয়্যাল কলেজ অফ সার্জন ইন আয়ারল্যান্ডের ছাত্র ছাত্রীদের রুফাইদা আল আসলামিইয়া পুরস্কার দেওয়া হয়। রুফাইদা জানতেন, সেবার মাধ্যমে আল্লাহ তায়লার সংস্পর্শ পাওয়া যায়। সেই পথেই তিনি হেঁটে গিয়েছেন আজীবন।

লেখাঃ সালাম ওয়েব।

গুরুত্বপূর্ণ কিছু জিকির বা দোয়া :

গুরুত্বপূর্ণ কিছু জিকির বা দোয়া :

এক. প্রতিদিন ১০০ বার করে ‘সুবহানাল্লাহ’ পাঠ করলে ১ হাজার সওয়াব লেখা হয় এবং ১ হাজার গুনাহ ক্ষমা করা হয়।
(সহিহ মুসলিম: ৪/২০৭৩)

দুই. ‘আলহামদুলিল্লাহ’ জিকির মিজানের পাল্লাকে ভারী করে দেয় এবং এটা সর্বোত্তম দোয়া। (তিরমিজি: ৫/৪৬২)

তিন. ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সর্বোত্তম জিকির। (ইবনে মাজহা ২/১২৪৯)

চার. ‘সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ; ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার’ এই বাক্যগুলো আল্লাহতায়ালার নিকট অধিক প্রিয় এবং নবী করিম (সা.) বলেন, পৃথিবীর সমস্ত জিনিসের তুলনায় আমার নিকট অধিক প্রিয়। (সহিহ মুসলিম: ৩/১৬৮৫)

পাঁচ. হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি দিনে একশত বার ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী’ বলবে, তার গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেয়া হবে। যদিও তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হোক না কেন।
(বুখারী শরীফ, হাদীস-৫৯২৬)

ছয়. হযরত আবু মুসা আশআরী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. আমাকে বললেন, "হে আবদুল্লাহ ইবনে কায়স! আমি কি তোমাকে জান্নাতের গুপ্তধনসমূহের একটি গুপ্তধনের সন্ধান তোমাকে দেব না?" আমি বললাম, অবশ্যই দিন ইয়া রাসূলাল্লাহ সা.! তিনি বললেন, "তা হলো ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ"। (মুসলিম শরীফ, হাদীস-৪৮৭৫)

সাত. হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, "যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তার বিনিময়ে তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন।" (মুসলিম শরীফ, হাদীস-৫৭৭)

আট. হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে এমন বস্তুর কথা বলব না, যার ওপর আমল করলে তোমরা অগ্রগামীদেরকে পেয়ে যাবে এবং তোমাদের পরবর্তী কেউ তোমাদের ধারেকাছে আসতে পারবে না? আর তোমরা হবে সর্বোত্তম তাদের মধ্যে? তবে তারা তোমাদের মত হতে পারবে, যারা অনুরূপ আমল করবে। প্রতি নামাযের পর "৩৩বার সুবহানাল্লাহ" ৩৩বার আলহামদুলিল্লাহ এবং "৩৩বার আল্লাহু আকবার" বলবে। আর একশত পূর্ণ করবে "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কদীর।'
(বুখারী শরীফ, হাদীস-৭৯৮)