সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর উল্লেখযোগ্য দিক গুলো আলোচনা করুন

সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর উল্লেখযোগ্য দিক গুলো আলোচনা করুন
------------------------------------------------------------------------
১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কে হত্যার মাধ্যমেই বাংলাদেশে শাসনতান্ত্রিক ইতিহাসে সামরিক শাসনের প্রথম পর্ব শুরু হয় । এই প্রথম পর্ব ১৯৭৯ সালের ৬ই এপ্রিল পর্যন্ত বহাল ছিল । এই সময়ে সামরিক শাসকগণ বিভিন্ন ফরমান জারি করেন যা পরবর্তীতে সংবিধানে সংযুক্ত করা হয় । এটিই ৫ম সংশোধনী নামে পরিচিত । এই ৫ম সংশোধনী সাধারন সংশোধনী থেকে ভিন্ন ছিল ।কারন এই সংশোধনী আইনটি আপনা আপনি বা সরসরি সংবিধানের কোন বিধানকে পরিবর্তন ,সংশোধন বা বিলাপ সাধন করেনি বরং সামরিক শাসনামলে বিভিন্ন ফরমান ও আদেশবলে বাংলাদেশ সংবিধানের যে সকল সংশোধন করা হয়েছে সেগুলোকেই কেবল বৈধতা দেওয়া হয়েছে । এই সংবিধান আইন জাতীয় সংসদে অনুমোদিত হয় ১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল। এই আইন দ্বারা সংবিধানের চতুর্থ তফসিলের সংশোধন করা হয় এবং তাতে ১৮ প্যারাগ্রাফ নামে একটি নতুন প্যারাগ্রাফ যুক্ত করা হয়। এতে বলা হয় যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তারিখসহ ওই দিন থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল তারিখ পর্যন্ত (ওই দিনসহ) সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের যে কোনো ঘোষণা বা আদেশ বলে সম্পাদিত সংবিধানের সকল সংশোধনী, সংযুক্তি, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন ও বিলুপ্তি বৈধভাবে সম্পাদিত বলে বিবেচিত হবে এবং কোনো কারণেই কোনো আদালত বা ট্রাইব্যুনালে এসবের ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না।
এ সংশোধনীর মাধ্যমে নিম্নের উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো সংবিধানে সংযোজিত হয় ।
১। সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ সংযোজন করা হয়।
২। বাঙালি জাতীয়াতাবাদ কে বাংলাদেশী নামে আখ্যায়িত করা হয় ।
৩। সমাজতন্ত্রের পরিবর্তে ‘সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায় বিচার অর্থে সমাজতন্ত্র’ প্রতিস্থাপন করা হয় ।
৪। রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নীতি হিসেবে দ্বিতীয় ভাগে বলা হয়, ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসই হইবে যাবতীয় কার্যাবলীর ভিত্তি।
৫। ২৫(২) অনুচ্ছেদ সংযোজন করে বলা হয়-‘রাষ্ট্র ইসলামী সংহতির ভিত্তিতে মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক সংহত, সংরক্ষণ ও জোরদার করতে সচেষ্ট হইবেন।’
৬। মৌলিক অধিকার বলবৎকরণের ৪৪(১) অনুচ্ছেদে পুনঃসংযোজন করা হয় ।
৭। প্রধান বিচারপতি ও দুজন সিনিয়র বিচারপতি নিয়ে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠনের ব্যবস্থা করা হয়। বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে ন্যস্ত হয়।
৮। সংসদ কতৃক পাশকৃত বিলে রাষ্ট্রপতির ভেটো ক্ষমতা রহিত করা হয় ।
৯। মন্ত্রিসভার সদস্যগণের অন্তত চার পঞ্চমাংশ সংসদ সদস্য হওয়ার বিধান রাখা হয় ।
১০। ক্ষেত্রবিশেষে সরকারী অর্থ ব্যয় এর ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে অর্পন করা হয় ।
১১। যে সাংসদ সংসদের সংখ্যাগরিষ্ট সদস্যের আস্থাভাজন বলে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হয় রাষ্ট্রপতি কতৃক তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের বিধান করা হয় ।
উল্লেখিত এই সংশোধনীকে অবৈধ বলে হাইকোর্ট রায় দিয়েছিলো ২০০৫ সালের আগস্ট মাসে।
★কোন সাজেশান থাকলে কমেন্টে জানাবেন
সূত্রঃ বিভিন্ন গণমাধ্যম,ব্লগ,সাংবিধানিক রাজনীতির বই থেকে সংগৃহীত, সম্পাদিত ,সংক্ষেপিত একটি লেখা
মুহাম্মদ ইরফান উদ্দীন
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা(সুপারিশপ্রাপ্ত)
৩৭ তম বিসিএস নন-ক্যাডার

No comments:

Post a Comment