সমাস নির্ণয়ের যুগান্তকারী কৌশল

সমাস নির্ণয়ের যুগান্তকারী কৌশল


প্রথমে আমরা সমাসের কয়েকটি উদাহরণ
দেখি:
সাদা ও কালো = সাদা-কালো
চার পায়ের সমাহার = চতুষ্পদী
কূলের সমীপে = উপকূল
দশ আনন যার = দশানন
বনে বাস = বনবাস
ন জানা = অজানা
পল মিশ্রিত অন্ন =পলান্ন
যে চালাক সেই চতুর = চালাকচতুর
বজ্রে্র ন্যায় কঠিন= বজ্রকঠিন
পুরুষ সিংহের ন্যয় = পুরুষসিংহ
মন রূপ মাঝি = মনমাঝি
১) সাদা ও কালো = সাদা-কালো; আপনি
আলাদা করতে পারবেন এবং পূর্ব পদ ও
পরপদের প্রাধান্য সমান। অর্থাৎ আপনি
এদেরকে পৃথক করতে পারবেন। এরকম সমাস
কে দ্বন্দ্ব সমাস বলে।
২) চার পায়ের সমাহার = চতুষ্পদী; সমাহার
থাকলে এটি হবে দিগু সমাস। ব্যাকরণের
ভাষায়, যে সমাসের পূর্বপদ সংখ্যাবাচক
এবং সমাসটি সমাহার বা সমষ্টি অর্থ প্রকাশ
করে, তাকে দ্বিগু সমাস বলা হয়।
৩) কূলের সমীপে = উপকূল; ‘প্রতি’; ‘উপ’, ‘গর'
এরকম উপসর্গ বা অব্যয় পদ পূর্বে বসে সমাস
হলে তা অব্যয়ীভাব সমাস। এবং অব্যয়ের
অর্থই প্রাধান্য পাচ্ছে।
৪) দশ আনন যার = দশানন; আপনি হয়ত ভাবছেন
এটিকে "দশ আননের সমাহার" এভাবে
লিখবেন, কিন্তু দশানন বলতে দশটি মাথা নয়
বরং দশটি মাথা আছে এরকম ব্যক্তিকে
বুঝায়। এখন দেখুন, এটি পূর্ব পদ 'দশ' কিংবা
পরপদ 'আনন' কোনটিকে প্রাধান্য দিচ্ছে না।
যে সমাসে দুই পদের অর্থ প্রাধান্য না পেয়ে
তৃতীয় অর্থ প্রাধান্য পায়, তাকে বহুব্রীহি
সমাস বলা হয়।
৫) বনে বাস = বনবাস; এখানে শুধু একটি
বিভক্তি 'এ' লোপ পেয়েছে। যে সমাসের
পূর্বপদের বিভক্তি (২য়া থেকে ৭মী) লোপ
পায় এবং পরপদের অর্থের প্রাধান্য থাকে,
তাকে তৎপুরুষ সমাস বলা হয়।
৬) ন জানা = অজানা। পূর্বপদে না বোধক
অব্যয় যুক্ত হয়ে যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে
নঞ তৎপুরুষ সমাস বলা হয়।
৭) পল মিশ্রিত অন্ন =পলান্ন; প্রথমত দুটি পদই
বিশেষ্য। এটিকে আপনি ভাবতে পারেন 'পল
ও অন্ন' লিখলেও হবে। কিন্তু সাধারণভাবে
চিন্তা করুন, পলান্ন বলতে আমরা এমন অন্ন
বুঝাই যাতে পল মিশ্রিত আছে। একটি পদ
লোপ পায় এবং বিশেষণ-বিশেষ্যে, বিশেষণ-
বিশেষণে, বিশেষ্য-বিশেষ্যে সমস্তপদ হলে
সেটি কর্মধারয় সমাস হয়।মনে রাখবেন
তত্পুরুষ সমাসে শুধু বিভক্তি লোপ পায়।
৮) যে চালাক সেই চতুর = চালাকচতুর; প্রথমত
দুটি পদই বিশেষণ। এটিকে আপনি ভাবতে
পারেন 'চালাক ও চতুর' লিখলেও হবে। কিন্তু
সাধারণভাবে চিন্তা করুন, চালাকচতুর বলতে
আমরা একজন মানুষকে বুঝায় যে চালাক-চতুর
অর্থাৎ আপনি চালাক ও চতুর কে এখানে
আলাদা করতে পারবেন না। একটি ব্যক্তি বা
বস্তুকে বুঝায় এবং বিশেষণ-বিশেষ্যে,
বিশেষণ-বিশেষণে, বিশেষ্য-বিশেষ্য
ে সমস্তপদ হলে সেটি কর্মধারয় সমাস হয়।
বহুব্রীহি সমাসেও একটি বস্তু বা ব্যক্তিকে
বুঝায় কিন্তু বহুব্রীহির ক্ষেত্রে কোন পদের
অর্থই প্রাধান্য পায় না।
৯) বজ্রে্র ন্যায় কঠিন= বজ্রকঠিন; এখানে
(বজ্র) noun এবং (কঠিন)adjective ব্যবহৃত
হয়েছে এবং একটি তুলনা বুঝাচ্ছে, এটি
কর্মধারয় সমাস। যদি noun এবং adjective
থাকে তা উপমান কর্মধারয়।
১০) পুরুষ সিংহের ন্যয় = পুরুষসিংহ; এখানে
(পুরুষ) noun এবং (সিংহ)noun ব্যবহৃত হয়েছে
এবং একটি তুলনা বুঝাচ্ছে, এটি কর্মধারয়
সমাস। যদি noun এবং noun থাকে তা উপমিত
কর্মধারয়।
১১) মন রূপ মাঝি = মনমাঝি; এখানে একটি
তুলনা বুঝাচ্ছে কিন্তু তুলনাটি রুপার্থক।
এরকম সমাস হবে রূপক কর্মধারয়।
১২) যে সমাসের ব্যাসবাক্য হয় না, কিংবা
ব্যাসবাক্য করতে গেলে অন্য পদের সাহায্য
নিতে হয়, তাকে নিত্য সমাস বলে
অন্য দেশ = দেশান্তর;
ঈষৎ লাল = লালচে,
অন্যকাল = কালান্তর
কেবল দর্শন = দর্শনমাত্র
সমস্তগ্রাম = গ্রামশুদ্ধ
কেবল মাত্র = তন্মাত্র
অন্যস্থান = স্থানান্তর
অন্যগ্রাম = গ্রামান্তর
অন্যগৃহ = গৃহান্তর
১৩) প্রাদি সমাস
প্রাদি সমাস মূলত অব্যয়ীভাব সমাসের
বৈচিত্র্য। প্রাদি সমাসে সাধারণত প্র, পরা,
অনু ইত্যাদি উপসর্গ পূর্বপদে বসে।
প্র (প্রকৃষ্ট) যে বচন = প্রবচন
পরি (চতুর্দিকে) ভ্রমণ = পরিভ্রমণ
অনু (পশ্চাৎ) তাপ = অনুতাপ
১৪) উপপদ তৎপুরুষ: পকেট মারে যে =
পকেটমার; ছেলে ধরে যে = ছেলে ধরা, জল
দেয় যে =জলদ ইত্যাদি। পূর্বপদে নামপদ এবং
পরপদে ক্রিয়া থেকে যে সমাস হয়, তাকে
উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলা হয়।

No comments:

Post a Comment