ইতিহাসের পাতা থেকেঃ ১৯০৬ সালে বঙ্গভঙ্গের সময়ে হিন্দুরা কব্জিতে লাল সুতা বেঁধেছিল মুসলিমবিরোধী ঐক্যের প্রতীক হিসেবে
**************************************************************************
বর্তমানে আমরা রাস্তাঘাটে অধিকাংশ হিন্দুর কব্জিতে লাল সুতা বাঁধা দেখি, যেই লাল সুতা হলো হিন্দুদের মুসলিমবিরোধী ঐক্যের প্রতীক। আমরা জানি যে, ১৯০৬ সালে বঙ্গভঙ্গ হওয়ার পর হিন্দুরা এর বিরোধিতা করেছিল, কারণ তাতে করে মুসলমানরা এগিয়ে যাবে। সেই সময়ে তারা বঙ্গভঙ্গ বাতিল করতে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন শুরু করেছিল, যার আনুষ্ঠানিক সূত্রপাত হয়েছিল কব্জিতে লাল সুতা বাঁধার মাধ্যমে।
**************************************************************************
বর্তমানে আমরা রাস্তাঘাটে অধিকাংশ হিন্দুর কব্জিতে লাল সুতা বাঁধা দেখি, যেই লাল সুতা হলো হিন্দুদের মুসলিমবিরোধী ঐক্যের প্রতীক। আমরা জানি যে, ১৯০৬ সালে বঙ্গভঙ্গ হওয়ার পর হিন্দুরা এর বিরোধিতা করেছিল, কারণ তাতে করে মুসলমানরা এগিয়ে যাবে। সেই সময়ে তারা বঙ্গভঙ্গ বাতিল করতে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন শুরু করেছিল, যার আনুষ্ঠানিক সূত্রপাত হয়েছিল কব্জিতে লাল সুতা বাঁধার মাধ্যমে।
প্রাবন্ধিক নীরদ সি চৌধুরীর জন্ম ১৮৯৭ সালে, সুতরাং ১৯০৬ সালে বঙ্গভঙ্গের সময়ে তার বয়স হবে নয় বছর। সেই সময়কার ঘটনা নিয়ে সে তার বই The Autobiography of an Unknown Indian এ লিখেছে-
“যেই দিন পার্টিশন (বঙ্গভঙ্গ) হলো, সেই দিন আমাদের বাসায় এক ব্যক্তিকে ডাকা হল। তার হাতে ছিল লাল সুতার বাণ্ডিল। বাবা আমাদেরকে বললেন নদীতে গোসল করে আসতে, এরপর আমাদের কব্জিতে লাল সুতা বাঁধা হলো বাংলার সমস্ত হিন্দুর ঐক্যের প্রতীক হিসেবে (মূল ইংরেজিতে: as a token of brotherhood of all bengalis.)"
এই লাল সুতা বাঁধার দ্বারা নীরদ সি চৌধুরীর গ্রামের সমস্ত হিন্দু শিশুরা তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন হল। নীরদ সি চৌধুরী নিজে লিখেছে যে, তার স্কুলে হিন্দু ছাত্রের সমসংখ্যক মুসলমান ছাত্রসংখ্যা ছিল। সেসব মুসলমান সহপাঠিদের সাথে হিন্দুরা একসাথে খেলেছে-হেসেছে, কিন্তু বঙ্গভঙ্গের পরেই তাদের সাথে সম্পর্ক তিক্ত হতে শুরু করে।
একপর্যায়ে নীরদ সি চৌধুরীর সমস্ত হিন্দু সহপাঠিরা মিলে তার স্কুলের হেডমাস্টারের কাছে অভিযোগ করল, যেন মুসলমান সহপাঠীদেরকে তাদের পাশে বসতে না দেয়া হয়। তাদের গা থেকে নাকি পেঁয়াজ-রসুনের গন্ধ বের হয়। অথচ বঙ্গভঙ্গের আগে তারা সবাই মিলেই কিন্তু একসাথে ক্লাস করে এসেছে। এটি ছিল হিন্দুদের কব্জিতে লাল সুতা বাঁধার একটি উল্লেখযোগ্য মনস্তাত্বিক প্রভাব।
তবে হিন্দুদের কর্মকাণ্ড শুধু এটুকুতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তারা ঘরে ঘরে অস্ত্র মজুদ করা শুরু করে দিল। কুমিল্লায় নওয়াব সলিমুল্লাহর এক জনসভায় হিন্দুবাড়ি থেকে বন্দুক দিয়ে গুলি করা হল, তিনি সভা বন্ধ করে ঢাকায় চলে যেতে বাধ্য হলেন। বাংলার সমস্ত হিন্দুরা এতে ভীষণ উৎফুল্লিত হল। নীরদ সি চৌধুরীর কিশোরগঞ্জ শহরে তাদের বাপ-দাদারা বিষয়টি নিয়ে খুব আমোদের সাথে গল্প করত, বলত “খুব ভালো হয়েছে। গুলি করে একেবারে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছি।”
এর মধ্যে খবর হল, সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী কিশোরগঞ্জ আসবেন। তিনি নওয়াব সলিমুল্লাহর একজন অন্যতম সহযোগী, তাই তাকেও একই সন্ত্রাসবাদী উপায়ে ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠল কিশোরগঞ্জের হিন্দুরা। নীরদ সি চৌধুরী তার আত্মজীবনীতে এ প্রসঙ্গে লিখেছিল-
Trunkfuls of pistols and ammunition had been passed from house to house; swords, spears, and even bows and arrows had been collected in large quantities. Every hindu house would have been defended by men practiced in arms, and blood would have flowed had there been a clash.
অর্থাৎ “প্রত্যেক বাড়ি বাড়ি ট্রাঙ্কভর্তি পিস্তল এবং গুলি পৌঁছে গিয়েছিল। তরবারি, বর্শা এমনকি তীর-ধনুকও সংগ্রহ করা হয়েছিল বিপুল পরিমাণে। প্রত্যেক হিন্দুবাড়িতে পুরুষেরা অস্ত্রহাতে প্রস্তুতি নিয়েছিল, এবং যে কোন সংঘর্ষের পরিণতি ছিল অনিবার্য খুনোখুনি।”
বর্তমান ২০১৬ সালে হিন্দুরা যে কব্জিতে লাল সুতা বাঁধছে, তার উদ্দেশ্য কী ১১০ বছর আগেকার বঙ্গভঙ্গের সময়কার উদ্দেশ্যের তুলনায় ভিন্ন? নিজেকে কিছু প্রশ্ন করুন পাঠকেরা-
১) তখন হিন্দুরা লাল সুতা পরেছিল মুসলিমবিরোধী ঐক্য গঠনের টোকেন বা চিহ্ন হিসেবে। বর্তমানেও কী হিন্দুরা মুসলিমবিরোধী ঐক্য গঠন করছে না? হিন্দু শিশুদের ছোটকালেই মুসলিমবিদ্বেষের সবক দিতে দেশের জায়গায় জায়গায় কী ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠছে না একের পর এক ‘গীতা স্কুল’? জাগো হিন্দু, হিন্দু মহাজোটের মত উগ্র হিন্দু সংগঠনগুলোর কার্যক্রমে কী হিন্দুরা একত্রিত হচ্ছে না?
২) আপনার পাশের লাল সুতা পরা হিন্দু সহপাঠি কিংবা কলিগটি কি সুযোগ পেলেই আপনাকে অপমান করছে না, আপনার ধর্মকে অপমান করছে না? তারা কি আলাদা কোন কমিউনিটি গঠনের চেষ্টা করছে না? যেভাবে বঙ্গভঙ্গের সময়ে নীরদ সি চৌধুরীর সহপাঠি মুসলিম ছাত্রদের দূরে ঠেলে দেয়া হয়েছিল?
৩) সবচেয়ে বড় কথা, লাল সুতাওয়ালারা কী ঘরে ঘরে অস্ত্র মজুদ করছে না? ঢাকাস্থ কদমতলা রাজারবাগ কালীবাড়ি এলাকার অধিকাংশ হিন্দু বাড়িতেই আগ্নেয়াস্ত্র মজুদ আছে। তাদের বাড়িতে বাড়িতে এই অস্ত্র সরবরাহের জন্য আড়াল থেকে কাজ করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের হিন্দু নেতা চিত্তরঞ্জন দাস। উল্লেখ্য গত ১ বছর আগে প্রেসক্লাবে এক সভায় বাংলাদেশের হিন্দুদেরকে ঘরে ঘরে অস্ত্র রাখার আহবান জানিয়েছিলো হিন্দু মহাজোটের নেতা গোবিন্দ প্রামাণিক (http://bit.ly/2d3jUJM)।
সুতরাং মুসলমানরা সাবধান হোন। সেই সময়ে হিন্দুরা কব্জিতে লাল সুতা বেঁধে ঘরে ঘরে অস্ত্র মজুদ করেছিল, কিন্তু মুসলমানরাও নিষ্ক্রিয় ছিল না। নীরদ সি চৌধুরী লিখেছে, তখন মুসলমানরাও সংবাদ পেয়ে গোপনে তাদের বাড়িতে অনুরূপ প্রস্তুতি নিয়েছিল হিন্দুদের হামলা ঠেকানোর জন্য। মুসলমান নেতারাও নিষ্ক্রিয় ছিলেন না, এই নবাব সলিমুল্লাহ আর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মুসলিম লীগ, প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। একারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের নামকরণ করা হয়েছে ‘সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন’।
কিন্তু আফসোস, এখন মুসলিম নেতারা নিজেরাই হিন্দুত্ববাদে দীক্ষিত হয়েছে, তাই তারা এখন লাল সুতাওয়ালাদের সাথে আঁতাত করে বিশ্বাসঘাতকতা করছে স্বজাতির সাথে। আর মুসলমানরাও হয়েছে গাফিল ও নিষ্ক্রিয়। এই লাল সুতাগুলো এতো ইসলাম নিয়ে কটূক্তি করে, এতো এতো মুসলিম মেয়েদেরকে রেপ করে, তবুও বাঙালি মুসলমান নামক এই মরা গোশতগুলোর কোন অনুভূতি জন্মে না।
No comments:
Post a Comment