প্রতিদিনের পাঁচ খাবার ডেকে আনছে মরণব্যাধি ক্যান্সার!
ক্যান্সার যে একটি ‘মরণব্যাধি’ এটা এখন কারোরই অজানা নয়। এখন পর্যন্ত ক্যান্সারের কার্যকর কোনো ওষুধ আবিষ্কার করতে পারেনি বিজ্ঞানীরা। এ কারণে এ রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। ক্যান্সার চিকিত্সার জন্য নিত্যনতুন গবেষণা অব্যাহত রেখেছে চিকিত্সা বিজ্ঞানীরা। ক্যান্সারের জন্য দায়ী অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনের পেছনের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে ক্যামব্রিজের একদল গবেষক জানিয়েছেন, নিত্যদিনের খাবারের তালিকায় থাকা নানা ধরনের মুখরোচক খাদ্যও হতে পারে প্রাণঘাতী ‘ক্যান্সারের ঝুঁকির’ কারণ।
এ বিষয়ে সম্প্রতি বিশদ জানিয়েছে ‘প্রিভেনশন পালস’ নামের একটি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ওয়েব সাইট। এতে বলা হয়েছে, আমাদের দৈনন্দিন খাবারের তালিকার মধ্যে বেশ কয়েকটি খাবার শরীরের মধ্যে এই মরণঘাতি রোগ ডেকে আনতে মূল ভূমিকা পালন করে। এসব খাবারের মধ্যে এমন ৫টি খাবার এই তালিকায় রয়েছে, যা আমরা প্রায় প্রতিদিনই গ্রহণ করি। এখানে এই পাঁচটি খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হলো।
১. সোডা-যুক্ত সফট ড্রিঙ্ক সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা জ্ঞাপন করেন প্রায় প্রত্যেক পুষ্টিবিদই। ফাঁকা ক্যালরি উৎপাদনকারী এই সব পানীয় যে ওজন বৃদ্ধি, পেটে জ্বালা ও রক্তে শর্করা বাড়িয়ে দেয়, তা সকলেরই জানা। কিন্তু সেই সঙ্গে এটি যে গোপনে ক্যান্সারের মতো ব্যাধিকেও প্রশ্রয় দেয়, তা জানিয়েছে ‘আমেরিকান জার্নাল অফ নিউট্রিশন’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা নিবন্ধ। এই পানীয়ে যে কৃত্রিম রং ও অতিরিক্ত রাসায়নিক পদার্থগুলি ব্যবহৃত হয়, তা দেহের ক্যানসার প্রবণতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।
২. পোট্যাটো চিপস। এটিও একটি হাই ক্যালরি ডায়েট। ওজন বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এটি উচ্চ রক্তচাপকেও ডেকে আনে। কিন্তু তার চাইতেও ভয়ের কথা, পোট্যাটো চিপস তৈরির সময়ে যে সব প্রিজারভেটিভ ও রং ব্যবহৃত হয়, তা এই খাবারটি প্রস্তুতকালে বিপুল তাপমাত্রার সংস্পর্শে আসে। এর ফলে তৈরি হয় ‘অ্যাক্রিলামাইড’ নামের একটি পদার্থ। এই অ্যাক্রিলামাইড সিগারেটেও পাওয়া যায়। এবং এটিকে ক্যানসারের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন বিশেষজ্ঞরা।
৩. বাঙালির খাদ্যতালিকায় মাছের উপস্থিতি অনিবার্য। কৃত্রিম প্রজনন ও বিশেষ পদ্ধতিতে চাষ হয় এমন কিছু মাছ সম্পর্কে সতর্ক হতে নির্দেশ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে, তেলাপিয়া মাছটি থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। ইউনিভার্সিটি অফ অ্যালবানির একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এই মাছটি চাষে ব্যবহৃত হয় বিপুল পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক এবং কীটনাশক। এই রাসায়নিকগুলি ক্যান্সার প্রবণতাকে বাড়িয়ে দেয় বলেই দাবি বিশেষজ্ঞদের।
৪. ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত হয়ে চিনি ছাড়তে হয় আমাদের অনেককেই। কিন্তু মিষ্টি ত্যাগ করলেও অনেকেই চা বা কফিতে চিনি ছাড়তে পারি না। চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করি অন্য কিছু। চিনির বিকল্প হিসেবে যে পদার্থগুলি আমরা খেয়ে থাকি, তা একান্তভাবেই রাসায়নিক। এতে ব্লাড সুগার লেভেল আদৌ কমে না বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তার উপরে এই কৃত্রিম শর্করা দেহে ডিকেপি নামের এক বিষাক্ত পদর্থের জন্ম দেয়, যা ব্রেন টিউমারের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
৫. বেশির ভাগ ভারতীয়ের কাছে আচার অতি লোভনীয় এক খাদ্য। কিন্তু মাউন্ট সিনাই স্কুল অফ মেডিসিন-এর একটি গবেষণা জানাচ্ছে, আচার গ্যাস্ট্রিক ক্যানসারের একটি বড় কারণ। প্রত্যহ আচার খান এমন মানুষের উপরে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, এঁদের মধ্যে ৫০ শতাংশ ব্যক্তির গ্যাস্ট্রিক ক্যানসার-প্রবণতা বেড়ে গিয়েছে। পরিমাণে কম বা মাঝে মধ্যে আচার খেলে ক্ষতি নেই। কিন্তু রোজকার খাবারের পাতে, দু’বেলা আচার খাওয়া ডেকে আনতে পারে সমূহ বিপদ।
তবে প্রাকৃতিকভাবে কিছু খাবার আছে যা এই মরণ ব্যাধিকেও প্রতিরোধ করতে সক্ষম। চিকিৎসকরাও বর্তমানে পুষ্টিকর খাদ্যের মাধ্যমেই বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের কথা বলছেন। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এই খাবারগুলো রাখা হলে মরণব্যাধি ক্যান্সারকে দূরে রাখা সম্ভব। এই খাবারগুলির মধ্যে রয়েছে ফুলকপি, তরমুজ, সবুজ শাক, পেঁয়াজ, মাশরুম, ডালিম, সামুদ্রিক মাছ, রসুন, গ্রিন টি, গাজর, বাদাম, হলুদ এবং খেঁজুর।
No comments:
Post a Comment