সমাস নির্ণয়ের এক মেগা পোস্ট।এরপর আর সমাস নিয়ে ভাবতে হবে না।

সমাস নির্ণয়ের এক মেগা পোস্ট।এরপর আর সমাস নিয়ে ভাবতে হবে না।যেহেতু সমাসের সবটুকু অংশ একসাথেই পোস্ট করেছি সেজন্য একবার পড়ে কিছুই শিখতে পারবেন না।তাই অবসর সময়ে দেখার জন্য পোস্টটি শেয়ার করে রাখুন।
★সমাস চেনার সহজ উপায়★
স্কুলে যখন ‘সমাস ‘ পড়ানো হত, তখন স্যারেরা একটু দুষ্টুমী করেই বলতেন ‘সমাস ‘ শিখতে নাকি ছয় মাস লাগে। কাজেই একদিনে শিখতে যাওয়া হবে বোকামী।ধীরে ধীরে সহজবোধ্য উপায়ে ব্রেইনে প্রবেশ করতে দিন।
১. দ্বন্দ্ব সমাস চেনার উপায় : ব্যাসবাক্যে ‘ও / এবং / আর’ থাকবে। উভয় পদের অর্থ প্রাধান্য পাবে।
সমীকরণ : সমজাতীয় পদ + ও + সমজাতীয় পদ।
[এখানে সমজাতীয় পদ মানে প্রথমটি বিশেষ্য হলে শেষেরটিও বিশেষ্যে; অনুরূপভাবে প্রথমটি বিশেষণ, সর্বনাম বা ক্রিয়া হলে যথাক্রমে শেষের পদটিও বিশেষণ, সর্বনাম বা ক্রিয়া হবে। ]
উদাহরণ :
ভাই + ও + বোন = ভাই-বোন
š š
(বিশেষ্য) (বিশেষ্য)
ভালো + ও + মন্দ = ভালো-মন্দ
যা + ও + তা = যা-তা
š š
(সর্বনাম) (সর্বনাম)
হেসে + ও + খেলে = হেসে-খেলে
š š
(ক্রিয়া) (ক্রিয়া)
২. দ্বিগু সমাস চেনার উপায় : ব্যাসবাক্যের শুরুতে সংখ্যা থাকবে এবং শেষে সমাহার কথাটি থাকবে। পরপদের অর্থ প্রাধান্য পাবে।
আচ্ছা, দ্বিগু শব্দের “দ্বি ” মানে কী? দ্বিতীয় শব্দে “দ্বি ” আছে না? আমরা ২ বুঝাতে “দ্বি ” শব্দটি ব্যবহার করি। ২ মানে কী? একটি সংখ্যা। তাহলে যে শব্দে সংখ্যা প্রকাশ পাবে এখন থেকে সেটাকেই “দ্বিগু ” সমাস বলে ধরে নিবেন। যেমন পরীক্ষায় আসলো শতাব্দী কোন সমাস? আচ্ছা শতাব্দী মানে হল শত অব্দের সমাহার। অর্থাৎ প্রথমেই আছে “শত ” মানে একশ, যা একটি সংখ্যা। সুতরাং এটি দ্বিগু সমাস। একইভাবে ত্রিপদী ( তিন পদের সমাহার)এটি ও দ্বিগু সমাস। কারণ এখানে ও একটি সংখ্যা (৩) আছে। এবার যেকোন ব্যাকরণ বই নিয়ে দ্বিগু সমাসের যত উদাহরন আছে সব এই সুত্রের সাহায্যে মিলিয়ে নিন।
সমীকরণ : সংখ্যা + বিশেষ্য + এর + সমাহার।
উদাহরণ :
পঞ্চ(পাঁচ)+নদীর (নদী+এর)+সমাহার
= পঞ্চনদ
š š
(সংখ্যা) (বিশেষ্য)
৩. তৎপুরুষ সমাস চেনার উপায় : পরপদের অর্থ প্রাধান্য পাবে।তবে এটা বিভক্তির সাথে সম্পর্কিত।সমস্তপদে যেখানে বিভক্তি লোপ পাবে সেখানেই তৎপুরুষ আসিয়া উপস্থিত হইবে।কিছু উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার করছি।
ব্যাসবাক্যে কে, রে (সাধারণ অর্থে) থাকলে- ২য়া তৎপুরুষ
উদাহরণ : বিপদকে আপন্ন = বিপদাপন্ন
ব্যাসবাক্যের মাঝে ব্যাপিয়া থাকলে- ২য়া তৎপুরুষ
উদাহরণ : চিরকাল ব্যাপিয়া সুখী = চিরসুখী
ব্যাসবাক্যের মাঝে দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক থাকলে- ৩য়া তৎপুরুষ
উদাহরণ : পদ দ্বারা দলিত = পদদলিত
ব্যাসবাক্যে কে, রে (দান/সম্প্রদানের অর্থে) থাকলে- ৪র্থী তৎপুরুষ
উদাহরণ : গুরুকে ভক্তি = গুরুভক্তি
ব্যাসবাক্যের মধ্যে নিমিত্তে, উদ্দেশ্য, জন্যে থাকলে- ৪র্থী তৎপুরুষ
উদাহরণ : আয়ের জন্য কর = আয়কর।
ব্যাসবাক্যে হইতে, থেকে, চেয়ে থাকলে- ৫মী তৎপুরুষ
উদাহরণ : বৃত্ত হইতে চ্যুত = বৃন্তচ্যুত
ব্যাসবাক্যে র, এর থাকলে- ৬ষ্ঠী তৎপুরুষ
উদাহরণ : রাজার পুত্র = রাজপুত্র
ব্যাসবাক্যে এ, য়, তে থাকলে- ৭মী তৎপুরুষ
উদাহরণ : গাছে (গাছ+এ) পাকা = গাছপাকা
ব্যাসবাক্যে বিশেষ্য+ক্রিয়া+যে / যা থাকলে- উপপদ তৎপুরুষ
উদাহরণ :
ধামা + ধরে + যে = ধামাধরা
š š
(বিশেষ্য) (ক্রিয়া)
ব্যাসবাক্যের শুরুতে ন, নয়, নাই থাকলে- নঞ তৎপুরুষ
উদাহরণ : ন (নাই) জানা = অজানা।
[বি.দ্র. ব্যাসবাক্যের শুরুতে ন, নাই এবং ব্যাসবাক্যের শেষে যে / যার থাকলে সেটি নঞ বহুব্রীহি সমাস। ]
যেমন : নাই জানা যা = অজানা।
ব্যাসবাক্যের বিভক্তি সমস্তপদে লোপ না পেলে- অলুক তৎপুরুষ
উদাহরণ : চোখের (চোখ+এর) বালি = চোখের বালি
৪. অব্যয়ীভাব সমাস চেনার উপায় :
ব্যাসবাক্যে সমীপে, সদৃশ, মতো, পুনঃপুনঃ (পদের দ্বিত্ব), অভাব, পর্যন্ত, অতিক্রম না করে, অধিকার করে, অতিক্রান্ত, বিরুদ্ধ, যোগ্য, ক্ষুদ্র, পশ্চাৎ, ঈষৎ, সকলেই প্রভৃতি থাকবে। উল্লেখ্য, সমস্ত পদের প্রথমে উপসর্গ (উপ, অণু, প্রতি, দূর, আ, যথা ইত্যাদি) থাকবে এবং পূর্ব পদের অর্থ প্রাধান্য পাবে। উপসর্গকে অব্যয়জাত শব্দাংশ বলা হয়।
উদাহরণ :
কূলের সমীপে = উপকূল;
বনের সদৃশ = উপবন
পাগলা মতো = পাগলাটে;
দিন দিন = প্রতিদিন
ভিক্ষার অভাব = দুর্ভিক্ষ;
মরণ পর্যন্ত = আমরণ
শক্তিকে অতিক্রম না করে = যথাশক্তি
আত্মাকে অধিকার করে = অধ্যাত্ম
বেলাকে অতিক্রান্ত = উদ্বেল;
বিরুদ্ধ বাদ = প্রতিবাদ
রূপের যোগ্য = অনুরূপ;
ক্ষুদ্র অঙ্গ = প্রত্যঙ্গ
গমনের পশ্চাৎ = অনুগমন;
ঈষৎ রাজি = নিমরাজি
পামর, জনসাধারণ সকলেই = আপামর জনসাধারণ
সুতরাং সমস্ত পদের শুরুতে অব্যয় সনাক্ত করা গেলে তা অব্যয়ীভাব সমাস।
৫. কর্মধারয় সমাস চেনার উপায় : পরপদের অর্থ প্রাধান্য পাবে।
খুব বেশি আসে পরীক্ষায় এখান থেকে। কর্মধারয় সমাসে “যে /যিনি/যারা ” এই শব্দগুলো থাকবেই। যেমন: চালাকচতুর – এটি কোন সমাস? চালাকচতুর মানে ‘যে চালাক সে চতুর ‘ তাহলে এখানে ‘যে ‘ কথাটি আছে,অতএব এটি কর্মধারয় সমাস। তবে কর্মধারয় সমাস ৪ প্রকার আছে। মুলত এই ৪ প্রকার থেকেই প্রশ্ন বেশি হয়। প্রথমেই আসুম মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস চিনি। নামটা খেয়াল করুন, মধ্যপদলোপী। মানে মধ্যপদ অর্থাৎ মাঝখানের পদটা লোপ পাবে মানে চলে যাবে। সহজ করে বললে হয়, যেখানে মাঝখানের পদটা চলে যায় সেটিই মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস। যেমনঃ সিংহাসন -কোন সমাস? সিংহাসন মানে ‘সিংহ চিহ্নিত যে আসন ‘। তাহলে দেখুন এখানে ‘সিংহ চিহ্নিত যে আসন ‘ বাক্যটি থেকে মাঝখানের “চিহ্নিত ” শব্দটি বাদ দিলে অর্থাৎ মধ্যপদ “চিহ্নিত ” শব্দটি লোপ পেলে হয় “সিংহাসন “। যেহেতু মধ্যপদলোপ পেয়েছে, অতএব এটি মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস।
উপমান কর্মধারয় সমাস কিভাবে চিনবেন জানেন? যদি ২টি শব্দ তুলনা করা যায় তবে সেটি হবে উপমান কর্মধারয় সমাস। যেমনঃ তুষারশুভ্র – কোন সমাসের উদাহরন? এটি পরীক্ষায় অনেকবার এসেছে। শব্দটি খেয়াল করুন “তুষারশুভ্র “। তুষার মানে বরফ, আর শুভ্র মানে সাদা। বরফ তো দেখতে সাদা। তাহলে তো এটি তুলনা করা যায়। অতএব এটি উপমান কর্মধারয়। একইভাবে “কাজলকালো “এটিও উপমান কর্মধারয় সমাস। কারণ কাজল দেখতে তো কালো রঙেরই হয়। তার মানে তুলনা করা যাচ্ছে। অতএব এটি উপমান কর্মধারয়।
এটি অন্যভাবে ও মনে রাখা যায়। উপমান মানে Noun + Adjective. যেমন তুষারশুভ্র শব্দটির তুষার মানে বরফ হল Noun, আর শুভ্র মানে সাদা হল Adjective। কাজলকালো শব্দটির কাজল হল Noun, এবং কালো হল Adjective। অতএব Noun + Adjective = উপমান কর্মধারয় সমাস।
উপমিত কর্মধারয় মানে যেটা তুলনা করা যাবে না। বিগত বছরের একটি প্রশ্ন ছিল :সিংহপুরুষ – কোন সমাসের উদাহরণ? খেয়াল করুন শব্দটি। সিংহপুরুষ মানে সিংহ আর পুরুষ। আচ্ছা সিংহ কি কখনো পুরুষ হতে পারে নাকি পুরুষ কখনো সিংহ হতে পারে? একটা মানুষ আর অন্যটা জন্তু, কেউ কারো মত হতে পারেনা। অর্থাৎ তুলনা করা যাচ্ছে না। তার মানে যেহেতু তুলনা করা যাচ্ছেনা, অতএব এটি উপমিত কর্মধারয় সমাস। চন্দ্রমুখ শব্দটি কোন সমাস? খেয়াল করুন মুখ কি কখনো চাঁদের মত হতে পারে, নাকি চাঁদ কখনো মুখের মত হতে পারে? কোনোটাই কোনটার মত হতে পারেনা। অর্থাৎ তুলনা করা যাচ্ছে না। তার মানে যেহেতু তুলনা করা যাচ্ছেনা, অতএব এটি উপমিত কর্মধারয় সমাস।
এটিও অন্যভাবে মনে রাখা যায়। উপমিত মানে Noun+ Noun. যেমন -পুরুষসিংহ শব্দটির পুরুষ ও সিংহ দুটোই Noun। অর্থাৎ Noun+ Noun। একইভাবে চন্দ্রমুখ শব্দটির চন্দ্র ও মুখ দুটিই Noun । অর্থাৎ Noun+ Noun। অতএব । অর্থাৎ Noun+ Noun= উপমিত কর্মধারয় সমাস
বাকি থাকল রুপক কর্মধারয় সমাস। এটিও খুব সোজা। রুপ- কথাটি থাকলেই রুপক কর্মধারয়। যেমনঃ বিষাদসিন্ধু -এটি কোন সমাস? বিষাদসিন্ধু কে বিশ্লেষণ করলে হয় “বিষাদ রুপ সিন্ধু “। যেহেতু এখানে রুপ কথাটি আছে, অতএব এটি রুপক কর্মধারয় সমাস। একইভাবে মনমাঝি -মনরুপ মাঝি, ক্রোধানল -ক্রোধ রুপ অনল, এগুলো ও রুপক কর্মধারয় সমাস, যেহেতু রুপ কথাটা আছে।
৬. বহুব্রীহি সমাস চেনার উপায় : অন্য / ভিন্ন পদের অর্থ প্রাধান্য পাবে। এখানে সবসময়ই তৃতীয় অর্থ প্রকাশ পাবে।
ব্যাসবাক্যে বিশেষণ + বিশেষ্য + যে / যার থাকলে-
উদাহরণ :
নীল + কণ্ঠ + যার = নীলকণ্ঠ
š š
(বিশেষণ) (বিশেষ্য)
ব্যাসবাক্যে বিশেষ্য + বিশেষ্য + যে / যার থাকলে-
উদাহরণ : আশীতে (দাঁতে) + বিষ + যার = আশীবিষ (সাপের বিষ দাঁত)
ব্যাসবাক্যে একই বিশেষ্য দুবার পাশাপাশি বসবে + যে + বিশেষ্য থাকলে-
উদাহরণ :
কানে কানে + যে + কথা = কানাকানি
(একই বিশেষ্য পদ) (বিশেষ্য)
ব্যাসবাক্যের মধ্যে ‘সহিত’ কথাটি থাকলে-
উদাহরণ :
স্ত্রীর সহিত বর্তমান = সস্ত্রীক
ব্যাসবাক্যে নাই / নয় + বিশেষ্য + যে / যার থাকলে-
উদাহরণ :
নাই + তার + যার = বেতার
ব্যাসবাক্যে সংখ্যা + বিশেষ্য + যার থাকলে-
উদাহরণ :
সে (তিন) + তার + যার = সেতার
উল্লেখ্য, অনেকেই ‘সেতার’ শব্দটিকে দ্বিগু সমাস মনে করে এভাবে ব্যাসবাক্য করতে চান-
সে (তিন) তারের সমাহার = সেতার। কিন্তু ‘সেতার’ বলতে শুধু তিনটি তারকে বুঝায় না; এটি বিশেষ বাদ্যযন্ত্রকে বুঝায়- যার তিন তার রয়েছে। অর্থাৎ এটি অন্য অর্থে / ভিন্ন পদের অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তাই এটিকে দ্বিগু সমাসে না করে সংখ্যাবাচক বহুবীহি সমাসের নিয়মে করলে ভালো হবে।
,বাংলা ব্যাকরণ এর নিয়মানুসারে ব্যাকরণ বুঝতে গেলে বিসিএস বা অন্য কোন চাকরির জন্য আর প্রস্তুতি নেয়াটা অনেক কঠিন হয়ে যাবে। কারণ বইতে যে ভাষায় ব্যাখ্যা করা আছে তা বুঝা অত্যন্ত কষ্টকর। তাই চেষ্টা করলাম সহজ ভাষায় উপস্থাপন করতে।

**যদি কারও ভালো লাগে এই ধরণের পোস্ট তাহলে ইংরেজীতে একটা thanks লিখুন**

17 comments: