৪০তম বিসিএস ভাইভা প্রস্তুতি নির্দেশনা
বিসিএস ভাইভা নিয়ে কিছু কথা
সোনিয়া মুন্নী
সহকারি পররাষ্ট্র সচিব
বিসিএস (পররাষ্ট্র), ৩৪তম বিসিএস ।
(শুরুর কথার পূর্ব কথা- অনেকেই ইনবক্সে ভাইভা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে সবার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি বলে আমি দুঃখিত।অনেক আপুরা জানতে চেয়েছেন ভাইভার ড্রেস কোড সম্পর্কে।আমি ফেইসবুকে একজন ক্যাডারের কাছ থেকে বিসিএস এর গাইডলাইন পেয়েছিলাম।তাই নৈতিক দায়বদ্ধতা থেকেই আপনাদের অনেকের জিজ্ঞাসার উত্তর দেয়ার চেষ্টা করলাম এবং এখানে একান্তই আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে মতামত দিলাম।পররাষ্ট্র যাদের প্রথম পছন্দ তারা অনেকেই ভাইভা প্রস্তুতি বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন ,সম্ভব হলে আর একটি পোস্ট দিবো সে সম্পর্কিত।এখানে মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে সব পরীক্ষার্থীর জন্য কিছু পরামর্শ দেয়ার চেষ্টা করলাম।)
- পরীক্ষার্থীকে প্রায় সব বোর্ডেই কমন কিছু প্রশ্ন করা হয়ে থাকে।যেমন-self introduction, academic background ,why first choice... etc...এগুলো আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে গেলে সুন্দরভাবে বলতে পারবেন।
- পছন্দক্রমের প্রথম ক্যাডার সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানুন।পরবর্তী দুটি ক্যাডার সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা নিয়ে ভাইভা বোর্ডে যাবেন।এক্ষেত্রে পত্র-পত্রিকা,উইকিপিডিয়া বা ভালো ভাইভা গাইডের পাশাপাশি ক্যাডার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ওয়েরসাইটের সহায়তা নি্তে পারেন।যেমন-পররাষ্ট্র যাদের প্রথম পছন্দ তারা www.mofa.gov.bd কিংবা অ্যাডমিন যাদের প্রথম পছন্দ তারা www.mopa.gov.bd এর সহায়তা নিতে পারেন।
- জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাম্প্রতিক আলোচিত প্রত্যেকটি ইস্যু সম্পর্কে ভালো ধরনা রাখুন।আর সে জন্য প্রতিদিন কয়েকটি পত্রপত্রিকা পড়ুন। টিভি/রেডিওতে নিউজ দেখুন/শুনুন।
- বিগত বিসিএস এর ভাইভা গ্রুপে অনেক পরীক্ষার্থী ভাইভা অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন যা গ্রুপগুলোতে এখনো আছে। প্রশ্নগুলো সংগ্রহ করে ধারণা নিন আপনার নিজের প্রথম পছন্দ যাদের প্রথম পছন্দ ছিল তাদেরকে কি ধরনের প্রশ্ন করা হয়েছে।কোন বোর্ডে কোন ধরনের প্রশ্ন করা হয়ে থাকে সে সম্পর্কেও ধরনা পাবেন এইসব প্রশ্ন দেখে।সেইভাবে প্রস্তুতি নিন।
- ভাইভা শুরু হলে প্রতিদিন-ই অনেকে ভাইভার প্রশ্ন গ্রুপে শেয়ার করবেন। সেইসব প্রশ্ন সংগ্রহে রাখুন এবং যে প্রশ্নগুলোর উত্তর আপনার জানা থাকবেনা সে উত্তরগুলো সেইদিন-ই শিখে নিন।
- ভাষা আন্দোলন,মুক্তিযুদ্ধ তথা বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে অত্যন্ত ভালোভাবে প্রস্ততি নিয়ে ভাইভা বোর্ডে যাবেন।‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ খুব ভালোভাবে পড়ুন যাতে এখান থেকে কোন প্রশ্ন করলে আপনি আটকে না যান।এছাড়া মুক্তিযুদ্ধবভিত্তিক দু/একটি উপন্যাস পড়ে যেতে পারেন।এক্ষেত্রে ‘জ্যোস্না ও জননীর গল্প’, ‘দেয়াল’, ‘১৯৭১’, ‘দুই সৈনিক’ কিংবা ‘নিষিদ্ধ লোবানে’র মত কোন বই পড়তে পারেন। মুক্তিযুদ্ধের উপর বাজারে ভালো ভাইভা গাইড আছে সেখান থেকেও প্রস্তুতি নিন।
- জেলা তথ্য বাতায়ন থেকে নিজ জেলা,বিভাগ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে যাওয়া উচিত।
- লিখিত পরীক্ষার জন্য সংবিধানের যেসব ধারা পড়েছেন তার সঙ্গে আপনার পছন্দের ক্যাডার সংশ্লিষ্ট ধারা জানতে হবে।পাশাপাশি সংবিধানের প্রস্তাবনা, তফসিল, সর্বশেষ অনুচ্ছেদ ,সবগুলো সংশোধনী সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা রাখুন ।
- বর্তমান সরকারের সাফল্য জেনে নিন।
- আপানি যে সাবজেক্টে অনার্স/মাস্টার্স করেছেন সে সাবজেক্টের বেসিক তো বটেই, সম্ভব হলে খুঁটিনাটি সব বিষয়ে ভালো ধারনা রাখুন।
- জেনারেল/বোথ ক্যাডারের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ বোর্ডেই ইংরেজিতে ভাইভা নেয়া হয় কিংবা কিছু প্রশ্ন অন্তত ইংরেজিতে করা হয়।পররাষ্ট্র যাদের প্রথম পছন্দ তাদের মোটামুটি সবাইকেই ইংরেজিতেই ভাইভা দিতে হবে।আর ফ্লুয়েন্টলি ইংরেজিতে কথা বলার জন্য নিয়মিত প্রাকটিস এর কোন বিকল্প নেই । প্রতিদিন অন্তত আধা ঘন্টা ফ্রেন্ড/রুমমেট/ভাই/বোন বা যে কারো সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলুন।ভাইভাতে যেসব প্রশ্ন আপনি ফেস করতে পারেন সেই সব টপিক নিয়ে কথা বলুন।
ভাইভাতে অবশ্যই ফর্মাল ড্রেস পরে যাবেন। সাজপোশাক নয় বরং আপনার ভালো প্রস্তুতিই আপনাকে একটি আত্মবিশ্বাসী লুক এনে দিবে। মার্জিত পোশাক আপনার রুচি ও ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ, যা শুরুতেই ভাইভা বোর্ডের সামনে আপনার একটি পজেটিভ ইমেজ তৈরি করবে।
- হালকা কালারের পোশাক নির্বাচন করুন।শীত না থাকলে ছেলেদের ব্লেজার পরা জরুরী না এবং টাই পরাও বাধ্যতামূলক নয় । মানে টাই ইচ্ছে না হলে পরবেন না।
- মেয়েরা শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ যে কোনটাই পরতে পারেন ।তবে মেয়েদের শাড়িতে বেশি ফর্মাল এবং সুন্দর লাগে।ব্যক্তিগতভাবে আমি ভাইভাতে মেয়েদের জন্য শাড়িকেই বেটার অপশন মনে করি।অফ হোয়াইট/আকাশি/হালকা যে কোন কালারের নর্মাল সুতি শাড়ি পরতে পারেন।খুব ছোট হাতার ব্লাউজ পরবেন না। শাড়ির সঙ্গে অল্প উচ্চতার হিল জুতা পরুন।তবে যে জুতা নির্বাচন করবেন/কিনবেন আগেই দেখে নিন হাটার সময় শব্দ হয় কিনা।এমন কোন জুতা পরে যাবেননা যা পরলে হাটার সময় শব্দ হয়। ভাইভা বোর্ডে একদমই সাজগোজ করে যাবেন না।একহাতে ঘড়ি এবং অন্য হাতে চিকন চুড়ি বা ব্রেসলেট পরতে পারেন। নেইলপলিশ /লিপিস্টিক/টিপ দিবেন না।হালকা কাজল পরতে পারেন আর লিপ কালারের লিপজেল/লিপবাম ব্যবহার করতে পারেন।মাইল্ড বডিস্প্রে দিতে পারেন,পারফিউম না দেয়াই ভালো।কিছু ফেসিয়াল টিস্যু আর লিপজেল আপনার সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারেন,ভাইভা বোর্ডে সিরিয়াল শেষের দিকে থাকলে কাজে লাগবে।তবে টিসুপেপার বা লিপবাম অন্য কোন ক্যান্ডিডেট এর কাছে রেখে যাবেন,অবশ্যই বোর্ডে নিয়ে যাবেন না।
অনেক পড়াশুনা করার পরেও ভাইভা বোর্ডে অনেক বা সবগুলো প্রশ্নই আপনার প্রস্তুতির বাইরে থেকে পেতে পারেন। এতে নার্ভাস হবেন না।আপনার সারা জীবনের অর্জিত জ্ঞান সর্বোপরি কমনসেন্স ও উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগান। ভাইভা দিতে গিয়ে কোন ভাবেই নার্ভাস হবেননা,মনে রাখবেন এই ভাইভা থেকে আপনার অনেক কিছু পাওয়ার থাকতে পারে হারানোর কিছুই নেই।তাই আত্মবিশ্বাসী হয়ে ভাইভা দিন।আর ভাইভা বোর্ডে কমন কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল রাখবেন- -
- ভাইভা দিতে যখন রুমে প্রবেশ করবেন/ বের হবেন খেয়াল রাখবেন দরজা খোলা বা বন্ধ করার সময় যেন শব্দ না হয়।
-দরজা খুলে অনুমতি নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করবেন ।তবে বোর্ডের কাছাকাছি দূরত্বে গিয়ে সালাম দিবেন।কারণ দূর থেকে সালাম ছুঁড়ে দেয়া কোন ভদ্রতা না আর বোর্ডের সন্মানিত মেম্বারগণ উচ্চস্বরে দূর হতে আপনার সালামের জবাব হয়তো দিবেন না ।
-আপনি বোর্ডের সামনে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বসতে বললে বসবেন। আর যদি আপনাকে বসতে না বলা হয় অবশ্যই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবেন বসতে বলার জন্য।
-বোর্ডের সঙ্গে কোনভাবেই তর্কে জড়াবেন না। প্রয়োজনে অনুমতি নিয়ে নিজের যুক্তি তুলে ধরার চেষ্টা করুন কিন্তু কিছুতেই তর্কে যাবেন না।
-কোন বিতর্কিত বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাওয়া হলে অবশ্যই সরকার যেটি চায় আপনি সেটির পক্ষেই আপনার মত দিবেন।কারন আপনি সরকারের অংশ হওয়ার জন্য সকারের প্রতিনিধিদের সামনে কথা বলবেন।
-সরকারের নেতিবাচক কোনকিছু বলবেন না। পজেটিভ ওয়েতে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দিবেন।আপনি অবশ্যই গ্লাসের অর্ধেক খালি দেখবেননা বরং অর্ধেক ভরা দেখবেন এবং বাকি অর্ধেক ভরার দায়িত্ব নিবেন (!)- এ ভাবেই আপনি দেশের উন্নয়ন বা সরকারের কোন কাজের বিষয়ে আপনার মতামত দেয়ার চেষ্টা করবেন।
-বোর্ডের সামনে ভয় পাবেন না কিন্তু বিনয়ী হবেন। বোর্ডের সন্মানিত মেম্বারগণ বয়সে আপনার পিতৃতুল্য এবং অনেক অভিজ্ঞ। তাই তাঁদের সামনে বিনয়ী হওয়া আপনার কর্তব্য।
সবকিছুর পরেও ভাইভা অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপারও! কিন্তু তবুও মানুষই জয়ী হতে পারে, আমরা পেরেছি ,আপনিও পারবেন।আপনার জন্য শুভ কামনা।
No comments:
Post a Comment