প্রিলি পাশের কিছু মানসিক প্রতিবন্ধকতা

 সামনে ৪১ প্রিলী পরীক্ষা, সবাই পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। আমি যখন প্রথম বিসিএস প্রিলি পড়াশোনা শুরু করি ২০১৬ সালে অনার্স ৪র্থ বর্ষে  থাকাকালীন তখন  থেকেই এই গ্রুপ থেকে বিভিন্ন ক্যাডার ভাইদের পরামর্শ অনুযায়ী পড়তাম। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি- বিশ্ববিদ্যালয় বলেন,পরিচিত ভাইব্রাদার যারা থাকে তাদের কাছ থেকে যতটুকু সাহায্য সহযোগিতা পাওয়া যায় তার থেকে ফেসবুকে বিভিন্ন ক্যাডার ভাই, বিভিন্ন ব্যাংকে কর্মরত ভাই, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ভাইদের থেকে অনেক বেশি সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছি।  আল্লাহর রহমতে,  সেইসব ভাইদের দেয়া পরামর্শ অনুযায়ী নিজের চেষ্টার দ্বারা দুটো ভাইভাতে উপস্থিত হয়ে দুটোতেই চাকরি পেয়েছি। জনতা ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত আছি, ৩৮ তম বিসিএস এ কৃষি ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হিসেবে আছি আল্লাহ তায়ালার রহমতে।


ফেসবুক বিভিন্ন গ্রুপ বিশেষত Zakir's BCS specials,  BCS: Our Goal, BCS Spotlight থেকে যতটুকু উপকৃত হয়েছি তার কিছুটা হলেও যদি ফেরত দিতে পারি, ১ জন হলেও যদি আমার দিকনির্দেশনা থেকে উপকৃত হয় তাহলে ভালো লাগবে। একেক মানুষের একেক ধরনের পড়াশুনার স্ট্রাটেজি থাকে তাই যার ভালো লাগবে সে গ্রহন করতে পারেন।


প্রিলি পাশের কিছু মানসিক প্রতিবন্ধকতা 


১. আমি প্রথমবার দিচ্ছি আমার মনে হয় হবেনা। অনেকে প্রস্তুতি ভালো হবার পরও প্রথম বিসিএস তাই সিরিআসলি নেয় না। তার পেছনে অন্যতম কারন কোচিং সেন্টার এর কিছু বড়ভাই, কিছু বিশিষ্ট বড় ভাই দের কাছ থেকে বিসিএস নিয়ে ভয় এর কথা শোনা।


২. গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবন্ধকতা হলো প্রশ্নবিশ্লেষন না করে গাইড বই এর একপাশ থেকে আরেক পাশ শেষ করা। এতে করে প্রয়োজনীয় বিষয়ের চেয়ে অপ্রয়োজনীয় বিষয় বেশি পড়া হয়ে যায় যার ফলশ্রুতিতে মাথা সিগনাল পায় সিলেবাস তো অনেক বড় আর সম্ভব না।তাই এ প্রতিবন্ধকতা দূর করতে কষ্ট করে হলেও ২-৩ দিন ব্যয় করে শুধু প্রশ্ন পড়া, ওই প্রশ্নটা গাইড বই এর কোন অংশ থেকে আসছে। সেটা কি টেক্সট বই এ পাওয়া যায় কিনা। গাইড থেকে এলেও একদম কমন নাকি গাইডের চিপা থেকে আসছে খোজ নেয়া


৩. দুই একটা কঠিন বিষয় না পেরে ভেংগে পড়া। বিশ্বাস করেন যারা ক্যাডার হচ্ছে, হয়েছে, সামনে হবে কেউ ই প্রিলির ২০০ নম্বরের বিষারদ নয়। আমার পরিচিত সফল সব ভাইকেই দেখেছি তারা এভারেজ ১৭০ নম্বরের প্রিপারেশন নিতেন। কঠিন বিষয়গুলো পড়ার সময়েই বাদ দিতে পারাটাও যোগ্যতা। আমি পড়ার সময় যেটা মনে রাখতে পারতাম না সেটা ভাবতাম এটা আসবে না,আর আসলেও এটা ছাড়া বাকিগুলো দিয়ে আমি প্রিলি টিকবো।


৪. যা গলা দিয়ে নামবে না সেটা ঠেলাঠেলি করে অসুস্থ হওয়া। ৫ নম্বরের কঠিন বিষয় আত্মস্থকরণ এ সময়, এনার্জি নষ্ট করা যা দ্বারা অনায়াসে অন্যবিষয়ে ১০ নম্বর দখলে নেয়া যেত। সময় এর গুরুত্ব বুঝতে ভুল করা। 


৫. কোন বিষয় পড়ার সময় সেটা দখল নিয়ে পরের টপিকে যাওয়া। যেকোন বিষয়ের যেকোন টপিক একদিনে একটানা ১০ বার পড়ার চেয়ে ১০ দিন অন্যবিষয়ের সাথে মিলিয়ে মিলিয়ে ১০ বার  পড়া বেশি কাজে দেয়। সব পড়াই ব্রেনে ঢোকানোর পাশাপাশি চোখে সেইভ করে রাখা, চোখে ভাসিয়ে রাখা যা কাজে দেয়।


৬. একটি বিষয় মনো পড়াশুনা করা। বাংলা ব্যাকরণ মানেই টানা ৩ দিন এটাই, পরের তিনদিন সাহিত্য এরকম। যেহেতু আমরা প্রিলিতে ২০০ মার্ক এর একটা জগাখিচুরি এক্সামে বসি তাই আমার ব্যক্তিগত অভিমত আগে থেকেই কয়েকটা বিষয় একসাথে কমপক্ষে ২ টি বিষয় একসাথে পড়াশোনা করা।


৭. ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা না করে পড়াশোনা করা। পড়তেছি,  পড়া হচ্ছে বিষয়টা এমন না। আগামী ১ মাস,আগামী ২ মাস এর পড়ার নির্দিষ্ট রুটিন রাখা। পরীক্ষার আগের ১৫ দিন এর জন্য নিজের সাধ্য সময় অনুযায়ী উপযুক্ত রুটিন করে রিভিশন করা।


৮. প্রতিটা বিষয়ের জন্য কোন কোন বই পড়বো সেটা ফিক্সড করা। সম্ভব হলে  সাবজেক্ট অনুযায়ী টপিকগুলো খাতায় লিখে কোথা থেকে পড়বো সেটা ফিক্সড করা।  এটা প্রস্তুত করতে কিছুটা সময় লাগলেও প্রিলির আগেই ভাইটাল মুহুর্তে কোনটা কোথা থেকে পড়বো খুজতে গিয়ে মাথা গরম হবে না


৯. আশেপাশের পড়ুয়া মানুষ দেখে নিজেকে ছোট ভাবা। ভাই/ বোন আপনাকেই বলছি প্রতিবছর আপনার সাথে প্রিলি এক্সাম দেয় আগের রিটেনের ভাইয়ারা, আগের বিসিএসের এর ক্যাডার ভাইয়েরা, তারও আগের বিসিএস এ ক্যাডার চেঞ্জ  এর আশায় থাকা ভাইয়েরা। তাই আশেপাশের ওমুক তমুক ভাই এর প্রস্তুতি দেখে নিজেকে ছোট ভাবার কিছু নাই। আপনি যদি বুকে হাত রেখে বলতে পারেন যে আমি আমার সবটুকু দিয়ে টেকনিকালি পড়াশুনা করেছি ইন -শা -আল্লাহ আপনি সফল হবেন ই। সত্যিকারের পরিশ্রম করে কেউ কোন জব পায়নি সেটা আমি দেখিনি।


আমার প্রিলির প্রিপারেশন এর জন্য টপিক সিলেক্ট করে কয়েকটা বই থেকে পড়েছিলাম। আর টপিক সিলেকশন এর জন্য প্রচুর এনালাইসিস করতাম যা আমাকে সাহায্য করেছিলো প্রতিটা প্রিলি পাশ করতে। আমি প্রিলির আগে কোন কোচিং এ মডেল টেস্ট দেইনি তবে প্রচুর বাসায় টেস্ট দিতাম। প্রিলির দিন একটানা ১৪৮ টা দাগিয়েছিলাম, পরে আরও দশটার মতো দিয়েছিলাম। আমি নৈতিকতার জন্য আমার প্রস্তুতিতে ১ মিনিট ও ব্যয় করিনি। ফলে ১৯০ এ এক্সাম দেই। আমার ধারনা অনুযায়ী আমার প্রাপ্তনম্বর ছিল

বাংলা+ ইংরেজি(৬০/৭০)

ম্যাথ+ মানসিক(১৬/৩০)

বাংলাদেশ(১৮/৩০)

আন্তর্জাতিক ১৩/২০)

বিজ্ঞান+কম্পিউটার (২৩/৩০)

ভূগোল (৫/১০)

আর এর মাধ্যমেই একটি স্বপ্নের শুভ সূচনা হয়েছিলো। সামনে চেষ্টা করবো আমার ব্যক্তিগত অনুধাবন আপনাদের সাথে শেয়ার করতে। 

পরিশেষে,  কেউ ১ ঘন্টা/২ ঘন্টা চাকরির পরীক্ষায় হেরে যায়না, সে হেরে যায় তার আগে কয়েক মাসের প্রস্তুতির সময়।


শুভকামনা 

মোঃ নাসিব আহমেদ খান

৩৮ তম বিসিএস এ বিসিএস(কৃষি) ক্যাডারে সুপারিশপাপ্ত(১২ তম)

জনতা ব্যাংক লিমিটেড এ সিনিয়র অফিসারে কর্মরত

No comments:

Post a Comment