40th BCS Preli Preparation Tips - ৪০তম বিসিএস প্রিলি প্রস্তুতি নির্দেশনা
Tawhidul Islam Khan
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা , সুপারিশ প্রাপ্ত ,( ৩৭তম বিসিএস )
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা , সুপারিশ প্রাপ্ত ,( ৩৭তম বিসিএস )
অনেকেই ইনবক্সে আমাকে বিসিএস সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্ন করে থাকেন। শুধু আমাকেই না, বিসিএস এর তিন গণ্ডি যারা টপকাতে পেরেছেন তারা প্রত্যেকেই কমবেশি এসব প্রশ্নের সম্মুখীন হন। যারা বিসিএস নামক মহাযুদ্ধের যোদ্ধা তারা ইতোমধ্যেই বুঝে গেছেন যে ইনবক্সে দেওয়া বিভিন্ন অভিজ্ঞ ভাইয়ের সাজেশন ভিন্ন ভিন্ন হয়। যেমনঃ কেউ আগে জব সল্যুশন সলভ করতে বলেন অথবা কেউ আগে বিষয় ভিত্তিক গাইড বই শেষ করে পরে জব সল্যুশন পড়তে বলেন। আবার কেউ আগে ডাইজেস্ট পড়তে বলেন আবার কেউ কেউ কোচিং করার পরামর্শ দেন অথবা কোচিং বিরোধী। এখানে কেউ-ই ভুল না এবং তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ কৌশলে সফল। তবে এই সফলতার পথ কখনই মসৃন ছিলো না। আবার অনেকেই আছেন যারা ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সফল হতে পারেননি তবে যারা সফল হয়েছেন তাদের থেকে তারা অনেক মেধাবী ও পরিশ্রমী। বিসিএস একটি চাকুরি ছাড়া আর কিছু নয়। আমরা যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী তারা অবশ্যই মানি যে, রিযিকের মালিক আল্লাহ। তাই আল্লাহ না চাইলে আপনি কখনই হাজার পড়াশুনা করেও এখানে সফল হতে পারবেন না আবার সামান্য পড়াশুনা করেও এখানে সফল হতে পারবেন। তাই যারা প্রথমবার বিসিএস পরীক্ষা দিবেন তাদের উদ্দেশ্যে বলছি প্রথমে আপনার সৃষ্টি কর্তাকে ডাকুন। তিনিই উত্তম রিযিক দাতা।
আমি কোনো বিসিএস অ্যানালিস্ট নই, কিভাবে বিসিএস এর প্ল্যানিং করে পড়তে হয় আমি সেটাই জানিনা। তাই আমার কাছে সবথেকে কঠিন দুইটা প্রশ্ন হচ্ছে ১. কিভাবে পড়লে বিসিএস হবে? ২. কোন প্রকাশনীর কোন বই পড়লে বিসিএস এ উত্তীর্ণ হওয়া যাবে?? আমার কাছে এর কোনো সদুত্তর নেই। কারণ বিসিএস নিয়ে আমার জীবনের দুইটা ঘটনা শেয়ার করলে আপনি ঠিক বুঝতে পারবেন।
আমি কোনো বিসিএস অ্যানালিস্ট নই, কিভাবে বিসিএস এর প্ল্যানিং করে পড়তে হয় আমি সেটাই জানিনা। তাই আমার কাছে সবথেকে কঠিন দুইটা প্রশ্ন হচ্ছে ১. কিভাবে পড়লে বিসিএস হবে? ২. কোন প্রকাশনীর কোন বই পড়লে বিসিএস এ উত্তীর্ণ হওয়া যাবে?? আমার কাছে এর কোনো সদুত্তর নেই। কারণ বিসিএস নিয়ে আমার জীবনের দুইটা ঘটনা শেয়ার করলে আপনি ঠিক বুঝতে পারবেন।
১.#৩৭তম
আমার জীবনের প্রথম কোনো চাকুরির পরীক্ষা। অনার্স লাইফ কেটেছে বেশির ভাগ সময় মোবাইলে গেম খেলে, কম্পিউটার নিয়ে প্রচুর ঘাটাঘাটি করে, ঠিক মত ক্লাস করতাম না, মুভি দেখতাম, আডডা দিতাম, আর কিছু সাংগঠনিক কাজ করতাম। তবে যে বিষয়টা পড়তাম চেষ্টা করতাম বেসিক ক্লিয়ার রাখার। মনে কোনো প্রশ্ন আসলেই গুগল মামার সাহায্য নিতাম। ইচ্ছা ছিলো কৃষি বিষয়ক কোনো গবেষণা প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানী হবার তাই থিওরি ক্লাস না করলেও প্র্যাক্টিক্যাল একটাও মিস দিতাম না। যখন বাস্তবতা বুঝলাম, তখন বিজ্ঞানী হবার আশা ছেড়ে দিলাম। বিসিএস শুধু নামে জানতাম। সিলেবাস কি, কারা এই পরীক্ষা নেয় কিভাবে নেয় এর কিছুই জানতাম না। ক্যাম্পাসে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন কোচিং এর ফ্রি ওরিয়েন্টেশন ক্লাস হত৷ ফাইনাল ইয়ারে থাকাকালীন আমিও সেখানে গিয়েছিলাম। যখন উপস্থিত অতিথি বক্তা আমাদের প্রতি বিভিন্ন প্রশ্ন ছুড়ে দিত তখন আমার বন্ধু/ছোট ভাই-বোন ঠাস ঠাস করে উত্তর বলে দিত। আমি ভাবতাম, খাইছে!! আমি তো সাবজেক্ট এর নামই জানিনা, আমার দ্বারা এটা সম্ভব না। আমি এমনই অজ্ঞ ছিলাম যে ফরেইন ক্যাডারকে চয়েজলিস্টে ৪ নাম্বারে রেখেছিলাম। অনেকে এটা নিয়ে হাসি ঠাট্টা করেছে, ভয় দেখিয়েছে আমাকে বোর্ড থেকে বের করে দিবে। আমি মনে মনে হাসি আর বলি আগে তো প্রিলি টিকে নেই, তারপর দেখা যাবে। তবুও অনার্স শেষ করে ভাই বন্ধুর পরামর্শে এক সেট বই কিনলাম। পরীক্ষার হাতে ছিলো ২ মাসের মত। গাইডলাইনের অভাবে বই উল্টাতে উল্টাতেই ১ মাস গেলো। পরে এসিউরেন্স ডাইজেস্ট (আমি মার্কেটিং করছিনা, এখন এর থেকেও ভালো ডাইজেস্ট বাজারে আছে) আর বিশেষ সংখ্যার কিছু অংশ পড়তে পড়তেই পরীক্ষা এসে গিয়েছিলো। তাই ভাবলাম ৩৭ কে মডেল টেস্ট হিসেবে নেই আর পরেরটা কোপাইয়া দিয়া আসব। তাই টেনশন ফ্রি হয়ে পরীক্ষা দিতে গেলাম। আমার ভাগ্য ভালো ছিলো কারণ আমার সেট এ বাংলা দিয়ে শুরু হয় নি। আমার মনে আছে আমি বাংলায় ১৯ টা আন্সার করে ১৭ টা ভুল করেছিলাম। আর বাকি গুলো থেকে যা আন্সার করছিলাম সব মিলিয়ে ৫-৬ টার বেশি ভুল হবে না। তবে বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ায় ম্যাথ, বিজ্ঞান, আর আই কিউ বেজড মানসিক দক্ষতায় মোটামুটি সব আন্সার করতে পেরেছিলাম। আর কম্পিউটার নিয়ে প্রচুর ঘাটাঘাটি করার ফলস্বরূপ আইসিটিও খুব ভালো হয়েছিলো। সাধারণজ্ঞান যা কমন ছিলো পেরেছিলাম। যাই হোক ফলাফল ছিলো আল্লাহর রহমতে পজেটিভ৷ রিটেন নিয়ে আর কিছু বললাম না। অনেকেই বলেছে রিটেনের জন্য মাস্টার্সে গ্যাপ দিতে৷ কিন্তু আমি মাস্টার্স, রিসার্চ আর রিটেন প্রিপারেশন একসাথে চালিয়েছি৷ আমার শ্রদ্ধেয় সুপারভাইজার স্যার ও ডিপার্টমেন্ট এবং বন্ধু-বান্ধব খুব সহায়ক ছিলো বিধায় তেমন বেগ পেতে হয় নি। ফরেন ৪ নম্বর পছন্দ ছিলো বিধায় ভাইভার সময় একটু ভয়ে ছিলাম। অনেক বন্ধু সাহস জুগিয়েছে, বলেছে এটা ব্যাপার না। তবে বোর্ডের কেউই এটা নিয়ে আমাকে কোনো প্রশ্ন করেন নি।
২.#৩৮তমবিসিএস
৩৭ তম তে যে বই গুলো কিনেছিলাম ওগুলো আর পড়া হয় নি। তবে লাইব্রেরিতে গেলেই পছন্দমত একটা দুইটা বই কিনতে কিনতে এমন কোনো প্রকাশনীর এমন কোনো বই নেই যে কিনি নাই। এবং চেষ্টা করেছি সেগুলো পড়ার।প্রয়োজনীয় নোট করার৷ মুভি, গেম সব বাদ। এমনকি একই বই দুই তিনটা এডিশন পর পর কিনতাম। কারণ ৩৭তম তে পোস্ট অনেক কম ছিলো। তাই যেভাবেই হোক ৩৮ প্রিলি পাশ করতে হবে৷ রিটেন পাশ করা সহজ তবে পরিশ্রমসাধ্য। যখন ৩৮ পরীক্ষা দেই প্রিন্টিং মিসটেক আর কনফিউশান এর কারণে ২০-২২ টা জানা উত্তর করতে পারিনি। বেশি পড়ার কুফল এটা। যাই হোক আল্লাহর ইচ্ছায় এটাতেও পার হয়ে গেলাম। বিশেষ কারণে কোনো প্রিপারেশন ছাড়া ৩৮ এর রিটেন পরীক্ষা দিয়েছি। বিশেষ কিছু আর আশা করছিনা। বিশেষ কোনো ক্যাডারের প্রতি আকর্ষণ না থাকায় আর আলসতার কারণে আর হয়ত বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হবে না।
এত কথা বলার উদ্দেশ্য এটাই ছিলো যে, বই কোনো ফ্যাক্টর না, আপনি বই থেকে ধারণা পাবেন কিন্তু ইউনিক প্রশ্ন কমন পাবেন না। কমন প্রশ্ন সব বইতেই কমন। এক কোচিং দাবী করেছিলো ৩৭ এর ৯২ টা প্রশ্ন তাদের লেকচার শীট থেকে এসেছে। ঐ ৯২ টা বিভিন্ন ক্যাডার-ননক্যাডার পরীক্ষার রিপিট প্রশ্ন যা জব সল্যুশনসেই আছে। বিসিএস প্রিলিমিনারি হলো, "jack of all trades, master of none" টাইপ মানুষদের জন্য। আপনার সব বিষয়ে মোটামুটি বেসিক একটা ধারণা আর একটু সাহস থাকলেই হয়ে যাবে। আর আপনি যেটাতে স্ট্রং, সেটা থেকে ম্যাক্সিমাম আউটপুট নিয়ে আসবেন। কিছুদিন আগে আমি বিসিএস এর দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে পোস্ট করেছিলাম। অনেকেই হতাশ হয়েছিলেন। হতাশ হবেন না। বিসিএস আর ব্যাংক এর থেকে সহজ ও স্বচ্ছ নিয়োগ বাংলাদেশে এখনো আসে নাই। তাই চোখ কান খোলা রেখে সবার সাথে সু সম্পর্ক বজায় রেখে প্রস্তুতি নিয়ে যান। কারণ আপনার ছোট ছোট পদক্ষেপ/পছন্দ আপনার ভবিষ্যত নির্মাণ করে। বিশৃঙ্খলা তত্ত্বানুসারে একে "বাটারফ্লাই ইফেক্ট" বলে। যাইহোক, বই নিয়ে আশা করি আপনাদের আর প্রশ্ন থাকবে না। হাতের কাছে যা রিসোর্স ম্যাটেরিয়াল আছে তাই নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ুন। সফল হবেন ইনশাআল্লাহ।
(কোনোরকম বানান ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। ধন্যবাদ।)
No comments:
Post a Comment